ঢাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নতুন প্রকল্প

রাজধানীবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে সায়েদাবাদ পানি শোধানাগার প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় অনুমোদন পেয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2015, 02:32 PM
Updated : 1 Sept 2015, 02:32 PM

মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পসহ মোট সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সায়েদাবাদ পানি শোধানাগার প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন হাজার ৫৩ কোটি টাকা বিদেশি সহায়তা এবং সরকারের তহবিল থেকে এক হাজার ৫১৪ কোটি টাকার যোগান হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত এই প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা বাস্তবায়ন করবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরে প্রতিদিন পানির গড় চাহিদা ২২০ কোটি লিটার, যার ৭৮ ভাগ আসে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এই চাহিদা বেড়ে দৈনিক ৬০০ কোটি লিটারে দাঁড়াবে।

ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে পানি তোলায় প্রতিবছর পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর চাহিদার ৭০ ভাগ পানি ভূউপরিস্থ উৎস থেকে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার হরিয়ায় মেঘনা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হবে সায়েদাবাদ শোধনাগারে। সেখান থেকে পরিশোধিত পানি সরবরাহ করা হবে ঢাকা মহানগরীতে।

প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৩ কিলোমিটার অপরিশোধিত পানি সরবরাহ লাইন নির্মাণ করা হবে। পরিশোধিত পানির বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে ৫৪ কিলোমিটার।

এর আগে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের দুটি পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি জানান, এই প্রকল্পসহ সাত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে সাত হাজার ২১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে তিন হাজার ৯৯৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার যোগান হবে। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে ১০৪ কোটি টাকা।

অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতেও ভূ-উপরিভাগের পানি সরবরাহে অন্য বড় প্রকল্পের সংশোধনীর অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা।

মন্ত্রী বলেন, কর্ণফূলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০০৬ সাল থেকে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৯৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ হিসেবে দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ টাকা সহায়তা দেবে।

৪১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা সেতু রক্ষা এবং মেঘনা ও গোমতী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে আরেকটি প্রকল্পও সভায় অনুমোদিত হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর মেঘনা সেতু ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হবে। কিছু অর্থ ব্যয় হবে গোমতী সেতুর সংস্কার কাজে।”

১৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইলের বিসিক শিল্প পার্ক স্থাপনে একটি প্রকল্প আনুমোদিত হয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।”

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ২৮০টি শিল্প প্লট স্থাপন করা হবে। মির্জাপুরের গোড়াইতে ২০১৭ সালের মধ্যে শিল্প পার্ক প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “১৯৯০ সালে টাঙ্গাইলে প্রথম শিল্প পার্ক হয়। এতে স্থাপিত প্রতিটি শিল্প-কারখানা বর্তমানে চলমান রয়েছে। নতুন এ শিল্প পার্কে ন্যূনতম ১০ ভাগ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।”

সভায় অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমন্বিত গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুর্নিবাড়ি থেকে চন্দনবাইশা পর্যন্ত যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাস্তা মেরামত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।