কমছে জ্বালানি তেলের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে দর অনেক কমলেও এতদিন ধরে না করে আসার পর এবার দাম সমন্বয় করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2015, 04:23 PM
Updated : 3 Sept 2015, 10:54 AM

আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে রোববার জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় এটা স্পষ্ট, মূল্য সমন্বয় করলে বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম কমবে।

সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সফররত আইএমএফ নির্বাহী পরিচালক রাকেশ মোহনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে জ্বালানি তেলের দাম ভালোই কমেছে। আমাদেরকেও রিভাইজ করতে হবে।

“সে জন্য জ্বালানি বিভাগকে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে একটা পেপার তৈরি করতে বলা হয়েছে। তারা পেপারটি তৈরি করলে সেই পেপারের আলোকেই অয়েল প্রাইস পুনর্নির্ধারণ করা হবে।”

কবে তা করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জ্বালানি বিভাগ পেপারটি তৈরি করুক। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র যাবেন, আমিও যাব। তার আগেই তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হবে।”

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৪০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালের মার্চের পর এই প্রথম জ্বালানি তেলের দাম এত নিচে নামল।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে (ডব্লিউটিআই) গত শুক্রবার প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৩৯ ডলার ৮৬ সেন্ট।

ইউরোপের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও ২০০৯ সালের মার্চের পর্যায়ে নেমে এসেছে। শুক্রবার প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয় ৪৫ ডলার ৪৬ সেন্টে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কমলেও স্থানীয় বাজারে কমায়নি সরকার।

তেলের দাম না কমানোর যুক্তি হিসেবে অর্থমন্ত্রী বার বার আগের ভর্তুকি কমিয়ে আনার কথা বলছিলেন।  

বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছিলেন, “বছর বছর লোকসান দিতে দিতে বিপিসি একটি ‘জঞ্জাল’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেই জঞ্জাল দূর করতেই তেলের দাম কমানো হচ্ছে না।”

সরকারের জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সব ধরনের তেল বিক্রি করে মুনাফা করছে বিপিসি।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বেতন কাঠামো মন্ত্রিসভায় অনুমোদন সেপ্টেম্বরে

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

নতুন বেতন-কাঠামো কবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন-কাঠামো এখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আছে। কিছু সংশোধন করে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উঠানো হবে। আমরা (আমি এবং প্রধানমন্ত্রী) সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে হবেই হবে।”

অর্থমন্ত্রী (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ বেতন ও চাকরি কমিশন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন ধরে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করেছিল। এরপর সচিব কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা সুপারিশ করেছে।

সচিব কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গত ১৩ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দপ্তরে প্রতিবেদনটি জমা দেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবে। যখনই বিষয়টি চূড়ান্ত হোক, গত ১ জুলাই থেকে অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকর বলে ধরা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন গত ২১ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে ১৬টি গ্রেডে বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে পাঁচ সদস্যের সচিব কমিটির সুপারিশে আগের মতো ২০টি গ্রেড রাখার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।

আইএমএফের বাকি কিস্তির অর্থ আসবে

অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটির বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ) বাকি দুই কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নতুন ভ্যাট আইন এবং আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম দিয়ে বিপিসির অডিট করানো নিয়ে- আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছিল- তা আলোচনার মধ্য দিয়ে সুরাহা হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। 

“এই দুই কিস্তির এক কিস্তি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে পাওয়া যাবে। পরে শেষ কিস্তিও ছাড় করবে সংস্থাটি,” বলেন মুহিত।

মুহিত বলেন, আইএমএফ নতুন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে আরও ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার ঋণ দিতে চায়।

অক্টোবরে পেরুর লিমায় আইএমএফের বার্ষিক সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান মন্ত্রী।