আর্থিক সেবা এখনও ব্যয়বহুল: অর্থমন্ত্রী

দেশে আর্থিক সেবা সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার হচ্ছে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 04:24 PM
Updated : 19 August 2015, 03:22 AM

তিনি বলেছেন, “আমাদের এখানে আর্থিক সেবা সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে। অনেক আর্থিক সেবা আমরা দিচ্ছি, তবে তার অনেক অসুবিধা রয়েছে। এর খরচ অনেক, যা বহু কষ্টে বহন করতে হয়। এর পর যেটা থাকে তা যথেষ্ট নয়।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে ‘বাংলাদেশে আর্থিক সেবার সুযোগ’ শীর্ষক এক আলোচনায় সেমিনারে এসব কথা বলেন মুহিত।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রঋণে ২৭ শতাংশ সুদ দিয়ে আয় করা অনেক কষ্টকর। দেশে যথেষ্ট বয়স্ক, অবসরপ্রাপ্ত ও মহিলানির্ভর পরিবারকে আর্থিক সেবা দিতে যে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে সে কাজটিও সহজ নয়।

সরকারি আর্থিক সেবার মধ্যে আমানত সংগ্রহ খাতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ সুদ বাড়ায় জনগণ এখাতেও অংশ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুহিত।

“তবে এখনও মেজর সার্ভিস ব্যাংক দেয়। ব্যাংকের বাইরে যারা আছে, তারা অনেক উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে আসে। তাদেরকে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।”

এসময় দেশের ২০ শতাংশ মানুষ ছাড়া বাকিরা কোনো না কোনোভাবে আর্থিক সেবার আওতাভুক্ত রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।  

আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিনান্সের (আইএনএম) দুদিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এই আলোচনা সভা হয়।

সেমিনারে আর্থিক বাজারের সেবা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক এম এ বাকী খলিলী। 

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশের শতকরা ৮৮ শতাংশ পরিবার আর্থিক বাজারের সেবা পাচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ পরিবার ব্যাংক থেকে সেবা নেয়। বাকিরা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ও অপ্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থা (মহাজনের ঋণ) থেকে সেবা পায়।

বাকী খলিলী বলেন, “ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে তা ধনী ও উচ্চ উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা পেয়ে থাকে। আর ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষ ও দরিদ্ররা ঋণ পায়।”  

তিনি জানান, শ্রমিকদের ২৫ শতাংশ কোনো জায়গা থেকে ঋণ পায় না। ৪২ শতাংশ মানুষ মনে করে তারা ঋণ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়।  

দেশের ১২ শতাংশ পরিবার বিমা খাতের সেবা নিচ্ছে। আর ৫২ শতাংশ পরিবার বীমা সেবা সম্পর্কে জানলেও প্রতারণার আশঙ্কায় তা থেকে দূরে থাকেন।

এসময় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম আরও বাড়াতে একটি জাতীয় নীতিমালা করার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে কাজের  সুযোগ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন পরামর্শ দেন বাকী খলিলী।

অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব হোসেন বলেন, “প্রচলিত আর্থিক সেবার ব্যাপ্তি বাড়লেও তা সমাজের গভীরে যেতে পারেনি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যতটা বক্তব্য শুনছি বা যে প্রচারণা রয়েছে ততোটা বাস্তবে হয়নি।”

বিশেষভাবে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ পদ্ধতি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে ঋণ বিতরণ করছে। এক বছরের কম বা বেশি মেয়াদে কোনো ঋণ প্রকল্প নেই।

“তবে এখন অনেক খাত- যেমন পশুপালন, মাছ চাষ ইত্যাদি এসেছে যেখানে কম সময়ের জন্য বা কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে বেশি সময়ের জন্য ঋণ দেওয়া যেতে পারে।”

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইএনএমের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।