ভারতীয় ঋণের অর্থে আগে হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল

ভারতীয় ২০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় প্রথম প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে মংলা ও ভেড়ামারায় ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ প্রকল্প, যাতে ব্যয় হবে প্রায় নয় কোটি ডলার।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2015, 04:51 AM
Updated : 6 August 2015, 06:05 AM

নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে ভারতের সঙ্গে হওয়া সমঝোতা চুক্তির ১৩ প্রকল্পের তালিকায় না থাকলেও ‘এস্টাবলিশমেন্ট অফ ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক জোন ইন মংলা অ্যান্ড ভেড়ামারা’ প্রকল্পে নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এতে শিগগিরই একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে একনেক সভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবে (পিডিপিপি) দেখা যায়, শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।  

পিডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ভারতীয় ২০০ কোটি ডলারের ঋণের আওতায় এর অর্থায়ন হবে।

এতে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। কারিগরি খাতে দক্ষ শ্রমিক গড়ে উঠবে। স্থানীয়দের কাজের সক্ষমতাও বাড়বে।   

গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৩ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় এই ঋণের আওতায় মোট ২৩৭ কোটি ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যার ৩৭ কোটি ডলার বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।

আগের ১৩ প্রকল্পের মধ্যে রেলের উন্নয়নে রয়েছে ৪৯ কোটি ডলার ব্যয়ের তিন প্রকল্প।

এগুলো হলো- ৩৮ কোটি ডলার ব্যয়ে রেলপথের খুলনা-দর্শনা সেকশনকে ‘ডাবল লাইনে’ উন্নীতকরণ, ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইনকে ডুয়েলগেজে উন্নীতকরণ, ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে সৈয়দপুর রেল স্টেশনের ওয়ার্কশপ নির্মাণ।  

পরিবহন খাতের মধ্যে ৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার ব্যয়ে বিআরটিসির জন্য ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহ, ৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার দিয়ে বিআরটিসির জন্য দ্বিতল বাস ক্রয় এবং ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার ব্যয়ে সড়ক ও জনপথের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি।

স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ভারতীয় ঋণে চারটি মেডিকেল কলেজ ও একটি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ডলার।

এছাড়া অন্য প্রকল্পের মধ্যে ১২ জেলায় আইটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ১০ লাখ ডলার।

নৌ পরিবহন খাতে আশুগঞ্জ নদী বন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। এ খাতের আরেকটি প্রকল্প হলো- আশুগঞ্জ বন্দরের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল উন্নয়ন প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার।

ভারতের ঋণের অর্থে ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও দুটি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট উন্নয়ন করা হবে। এর জন্য ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে নতুন করে ১ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন ঋণের সুদের হার ও শর্ত চলমান ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের মতোই হবে।

সে হিসেবে নতুন ঋণের সুদহার হবে ১ শতাংশ। শর্ত হিসেবে চলমান ঋণের মতোই নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।

এর আগে ২০১০ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়। তৎকালীন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ওই ঋণের ২০ কোটি ডলার পরে অনুদান (সুদবিহীন) ঘোষণা করেন। বাকি ৮০ কোটি ডলার দিয়ে ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়, যার ৭টির বাস্তবায়ন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।