হল-মার্কসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এসব বিলে স্বীকৃতি দেয় সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা। এখন এসব দায় সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে নিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে।
এজন্য সোনালী ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি (এফসি) ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ সংরক্ষিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এক চিঠি পাঠিয়ে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আহসানউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) ৫৮৬টি বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে সোনালী ব্যাংক স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই এমন অন্যান্য সব বিলও পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
হল-মার্কসহ আরও কয়েকটি গ্রুপকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে ২৩৩২টি অভ্যন্তরীণ বিলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃতি পেয়ে হল-মার্কসহ আরও কয়েকটি কোম্পানিকে দেশের ৪১টি ব্যাংক এসব বিলের বিপরীতে ১৩১৬ কোটি টাকা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে এসব বিলের মধ্যে ৫৮৬টি বিলে কোনো অনিয়ম না পাওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে এসব বিলের অর্থ সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত।
এর মধ্যে ১৫৮টি বিলের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ ডলার পরিশোধ করেছে। সোনালী ব্যাংক নিজে ২২২টি বিল পরিশোধ করেছে। বাকি বিলগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে।
এছাড়া অন্যান্য বিলের মধ্যে ১৩৬টি বিলের বিপরীতে ১০ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল করপোরেট শাখায় সৃষ্ট স্থানীয় আমদানি-রপ্তানির বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃতি দেওয়া বিলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৪২টি। এর বিপরীতে ৪১টি ব্যাংকের এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা পাওনা ছিল।
এই টাকা পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সোনালী ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় বিলগুলো আটকে যায়। দীর্ঘ আড়াই বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলগুলো পরিশোধে মধ্যস্থতা করলেও মামলা ও সোনালী ব্যাংকের আপত্তির কারণে তা পরিশোধ হয়নি।
সবশেষে ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ কেটে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে হল-মার্কসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিন হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে কিছু টাকা সমন্বয় হওয়ায় এখন তিন হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়ার দুই তৃতীয়াংশ অর্থ সরাসরি গ্রাহকের হাতে গেছে, যাকে ফান্ডেড দায় বলা হয়। বাকিটা এ ধরনের স্বীকৃত বিলের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, যাকে নন-ফান্ডেড দায় বলা হয়।