চীনা নাগরিকের ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপ মিলল ফেনীতে

চট্টগ্রামে এক চীনা নাগরিকের কাছ থেকে ছিনতাই করা ল্যাপটপ এক মাস পর উদ্ধার হয়েছে ফেনী থেকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2017, 12:44 PM
Updated : 23 August 2017, 12:44 PM

ফেনী স্টেশন রোডের রওশন আরা মার্কেটের নাহার টেলিকম নামের একটি দোকান থেকে মঙ্গলবার রাতে ল্যাপটপটি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে চীনা ওই নাগরিকের ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগে থাকা নগদ টাকা ও ডলার উদ্ধার করা যায়নি।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ মনিরুজ্জামান ওরফে দিলীপ বণিক (৪০) ও মো. সেলিম (৩৮) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) হাসান মোহাম্মদ শওকত আলী খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ১৮ জুলাই নগরীর আগ্রাবাদ এলাকা থেকে এক চীনা দম্পতির ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এরপর থেকে ডবলমুরিং থানা গোয়েন্দা পুলিশের দুইটি দল পৃথকভাবে কাজ শুরু করে।

অভিযানে গত ১৯ অগাস্ট হালিশহর এলাকা থেকে মনিরুজ্জামান ওরফে দিলীপ বণিককে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “ডবলমুরিং থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে এ ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে, ঘটনার সাথে সেলিম নামের একজনের জড়িত থাকার কথা জানায়।

“মঙ্গলবার সকালে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতে ফেনী স্টেশন রোড এলাকার রওশন আরা মার্কেটের নাহার টেলিকম নামে একটি দোকান থেকে ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপটি উদ্ধার করা হয়।”

ছিনতাইয়ের শিকার লি লি লিও জানান, ঢাকার উত্তরায় ইয়াজিং এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে গার্মেন্টস এক্সোসরিজ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে তিনি ও তার স্বামী কাজ করেন।

ব্যবসায়িক কাজে ১৮ জুলাই তারা চট্টগ্রামে আসেন। সকালে রিকশা করে সময় একটি অটোরিকশা থেকে তার ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়।

ব্যাগে বাংলাদেশি দুই লাখ টাকা, প্রায় এক হাজার মার্কিন ডলার, নাগরিক সনদ ও ব্যাংকের কার্ড ছিল বলে জানান তিনি।

এদিকে গ্রেপ্তার দিলীপের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা গত ২১ জুন খুলশী এলাকায় এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির মার্কিন শিক্ষকের ব্যাগ ছিনতাইয়ে জড়িত পলাতক আসামি শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মো. শহীদুল্লাহ বুধবার বলেন, “দিলীপকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সে পলাতক শাহজাহানের সন্ধান দেয় এবং খুলশী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

বিদেশি ওই শিক্ষকের ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ গত ২২ জুন রাতে গোপন নাগর পন্ডিত নামে একজনকে ‘অনিবন্ধিত’ সিএনজি অটোরিকশাসহ গ্রেপ্তার করে এবং ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপ, আইপট, মোবাইলসহ ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধার করে।

দিলীপকে গ্রেপ্তারের নেতৃত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইলিয়াছ খান জানান, গ্রেপ্তাররা নগরীর তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী। প্রায় ১০বছরেরও বেশি সময় ধরে নগরীতে ছিনতাইয়ের কাজ করে আসছে তার। তাদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভন্ন থানায় একধিক মামলা আছে।

তিনি বলেন, “নগরীতে ১০টির মতো দল ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। আর তাদের প্রতিটি দলের সাথে সম্পর্ক রেখে চলত দিলীপ। কোনো দলের কেউ একা হয়ে গেলে তাকে নিয়ে ছিনতাই করে সে।”

প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিনতাইয়ে জড়িত দিলীপ গত বছর গোয়েন্দা ও পাহাড়তলী থানা পুলিশের হাতে দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। তবে অল্পকিছুদিনের মধ্যে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।

গ্রেপ্তার দিলীপ পুলিশকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের পর তারা কয়েক শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে। তবে চীনা নাগরিকদের ব্যাগে তারা দুই লাখ টাকার চারটি বান্ডেল পাওয়ার পর ব্যাগটি ফেলে দেয়।

তবে ব্যাগে ডলার থাকার বিষয়টি সে জানত না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে।

দিলীপ আরও জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সকালে সেলিম তাকে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে। জিইসি, পাঁচলাইশ, চকবাজার নিউমার্কেট এলাকায় ঘুরে কোনো ছিনতাই করতে না পেরে তারা ঘরে ফিরে যাচ্ছিল।

চৌমুহনি মোড়ে তারা বিদেশি নারী দেখে তার কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া সহজ হবে বলে ধারণা করে আগ্রাবাদ বাদামতলা এলাকা থেকে অটোরিকশা ঘুরিয়ে চৌমুহনির দিকে এসে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

ঘটনার দিন সেলিম অটোরিকশা চালিয়েছিল বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন দিলীপ।