এক দুর্ঘটনায় নিহত গোটা পরিবার

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুই শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 07:03 PM
Updated : 20 August 2017, 12:57 PM

নিহতদের চারজনই পরিবারের। তারা হলেন শেখ মো. সোহেল (৩৫) ও তার স্ত্রী সাইমা বেগম বৃষ্টি (৩০) এবং তাদের দুই শিশু সন্তান শেখ সাদাব বিনতে সামরিন (৫) ও দেড় বছর বয়েসী শেখ সাফওয়ান বিন সাফরান।

নিহত অন্যজন হলেন ওই পরিবারকে বহনকারী অটোরিকশাচালক সুরুজ (৫৫)।

কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার রাত ১২টার দিকে সোহেলের পরিবারকে বহনকারী অটো রিকশাটি টোল দেওয়ার জন্য টোল প্লাজায় অপেক্ষা করছিল। তাদের সামনে ছিল একটি ট্রাক।

 “এসময় পেছন থেকে যাত্রীবাহী একটি বাস ওই অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে সামনের ট্রাকের সঙ্গে লেগে সেটি দুমড়ে মুচেড় যায় এবং ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।”

বাসটি বরযাত্রী নিয়ে আনোয়ারার দিকে যাচ্ছিল বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা ইমাম।

“অটো রিকশাটিকে চাপা দিয়ে চালক পালিয়ে যায়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটি আটক করলেও চালক বা যাত্রীদের কাউকে পাইনি।”

কর্ণফুলী থানা এলাকার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক বৃষ্টিও গত মঙ্গলবার মামাত বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ নিতে দুই সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের আলকরণের বাবার বাড়িতে এসেছিলেন।

বিয়ের অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় স্বামীর বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়েন।

বৃষ্টির স্বজনরা জানান, বছর ছয়েক আগে সোহেলকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন বৃষ্টি। এ বিয়ে মেনে নেয়নি সোহেলের পরিবার।

বৃষ্টি যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, সেখানে তাদের বড় মেয়ে সামরিন কেজিতে পড়ত। স্বামী সোহেল ছিল পেশায় ফ্রিজ মেকানিক।

বৃষ্টির ছোট ভাই আব্দুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের মামাত বোনের বিয়ে ছিল গত বৃহস্পতিবার। তাই হলুদের আগে মঙ্গলবার বৃষ্টি বাসায় এসেছিলেন।

বিয়ের পর শনিবার মামাত বোনের শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বৃষ্টি। রাতে ফিরে এসেছিলেন আলকরণ শেঠ পাড়ায় নিজের বাবার বাড়িতে। খাওয়া-দাওয়া শেষে মইজ্জারটেক নিজের বাসায় রওনা দেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আহাদ বলেন, “রাত সোয়া ১১টার দিকে আমি আর বাবা গিয়ে তাদের সিএনজি ঠিক করে দিয়েছিলাম। সোয়া ১২টার দিকে দুলাভাইয়ের নম্বর থেকে একজন আমাকে ফোন দিয়ে তাদের মৃত্যুর খবর জানায়।”

সকালে আলকরণ শেঠ পাড়ায় বৃষ্টির বাবার বাসায় গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের ভিড়। মা খোদেজা বেগম স্বজনদের দেখলেই আহাজারি করছিলেন, তাকে সান্ত্বনা জানাচ্ছিলেন অন্যরা।

হাসপাতাল থেকে রোববার দুপুরে লাশ নিয়ে আসা হয়েছিল বৃষ্টির বাসায়। নগরীর চৈতন্যগলি কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।