কোকেন চোরাচালান মামলার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষের নারাজি

চট্টগ্রাম বন্দরে ভোজ্যতেলের ঘোষণায় তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় চোরাচালানের ধারায় করা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র নিয়ে আদালতে নারাজি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2017, 08:02 AM
Updated : 9 August 2017, 08:04 AM

মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নূর বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের ওই নারাজি আবেদন গ্রহণ করে শুনানির জন্য ২৩ অগাস্ট শুনানির দিন রেখেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে কোম্পানির আনা সূর্যমুখী তেলের মধ্যে কোকেন এসেছিল, সেই খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ায় আমরা নারাজি জানানো হয়েছে।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান গত ১৪ মে নূর মোহাম্মদের নাম বাদ দিয়ে আদালতে ওই অভিযোগপত্র দেন।

একই ঘটনায় মাদক আইনে করা মামলার তদন্ত শেষেও নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশে র‌্যাব তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়; সেখানে নূর মোহাম্মদকেও আসামি করা হয়।

র‌্যাবের দেওয়া সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই ভোজ্যতেলের মাধ্যমে তরল কোকেন আনা হয়েছিল।

চোরাচালান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তার অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করেছেন।

এরা হলেন- খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মো. মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মো. মেহেদী আলম, গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে এম আজাদ, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।

কোকেন মেশানো সূর্যমুখী তেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদ (ফাইল ছবি)

এদিকে খান জাহান আলীর মালিক নূর মোহাম্মদ গত ৬ অগাস্ট শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে একটি মামলা করেন। তার দাবি, নিয়ম অনুসরণ না করে তার অজ্ঞাতে ভোজ্যতেলের ওই চালান আনা হয়েছিল।

নিজের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তি এবং শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস ও চালান পাঠানো বিদেশি কোম্পানি মিলিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ওই মামলায় বিবাদী করেছেন নূর মোহাম্মদ।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পরে পরীক্ষা করে তাতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।   

ওই বছর ২৮ জুন বন্দর থানায় নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। আদালত পরে মামলায় চোরাচালানের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান মাদক আইনের মামলায় আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম বাদ দেওয়ায় আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে র‌্যাবকে দিয়ে আবার তদন্ত করায়।

অধিকতর তদন্ত শেষে গত ৩ এপ্রিল নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে মাদক মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন র‌্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

এর আগে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি নূর মোহাম্মদকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। চলতি বছর ১১ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।