দিয়াজ হত্যা: ‘নির্দোষ’ দাবি করে মানববন্ধনে আসামিরা

দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ার পাঁচ দিনের মাথায় নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে মানববন্ধন করেছেন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2017, 02:58 PM
Updated : 7 August 2017, 04:48 PM

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ‘রেসকোর্স’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দুই আসামি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, সহ-সভাপতি মনসুর আলম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তোরাব পরশ। তারা ছাড়াও ছিলেন চারজন।

এদিনই আদালত দিয়াজের মা ও মামলার বাদী জাহেদা আমিন চৌধুরীর আবেদনে ১০ আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

গত বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাসা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর হত্যার অভিযোগ তোলেন তার সমর্থকরা।

তারা অভিযোগ তোলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে বিরোধের জেরে দিয়াজকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

দিয়াজ ও টিপু চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

দিয়াজ হত্যার পর প্রথম ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা উল্লেখ করা হলে তাতে আপত্তি জানান বাদী জাহেদা। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সম্প্রতি এসেছে, যাতে হত্যাকাণ্ড বলা হয়েছে।

এর মধ্যেই ‘দিয়াজের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন পরবর্তী দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং যে কোনো ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধের দাবিতে’ মানববন্ধন করে ‘রেসকোর্স’।

ইরফান চৌধুরী দিয়াজ

মানববন্ধনে আলমগীর টিপু বলেন, “২০ নভেম্বর থেকে একটি বিষয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তাহল আমার বন্ধু দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যু।

“সেদিন দিয়াজের বাসায় রাত ৮টার দিকে তার ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হয়। তারপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়।

“প্রথম ময়নাতদন্তে বলা হয়েছিল- আত্মহত্যা। এরপর থেকে আমরা বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে আসছি। এখন যেহেতু দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে এটিকে হত্যা হতে পারে বলা হয়েছে; এখন আমরা বলছি এটা হত্যা হতেও পারে।” 

প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে থেকেই আসামিরা দিয়াজের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে দিয়াজের পরিবারের অভিযোগ।

নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে টিপু বলেন, “কেবল রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে এ মামলায় আমাদের আসামি করা হয়েছে।

“কার প্ররোচনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হল, তা খুঁজে বের করার সময় এসেছে।”

আলমগীর টিপু

দিয়াজের মৃত্যুকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে টিপু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দিয়াজের সঙ্গে রাজনীতি করছি। একজন সহকর্মী হিসেবে তার সাথে রাজনৈতিকভাবে মনোমালিন্য থাকতে পারে। কিন্তু হত্যা করার মতো তিক্ত সম্পর্ক ছিল না।”

আসামিরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে গ্রেপ্তার এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল দিয়াজের পরিবার।

টিপু বলেন, “নিজেকে নির্দোষ দাবি করার জন্য বিদেশে পালিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলগ্রহে যেতেও প্রস্তুত আছি।”

মামলার আরেক আসামি মনসুর মানববন্ধনে বলেন, “দিয়াজ হত্যার সাথে আমি বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ত নই। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যে কোনে স্থানে উপস্থিত হতে রাজি আছি।

“প্রথম ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা আর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে হত্যা এসেছে। কার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দুই ধরনের প্রতিবেদন আসল, তা খুঁজে বের করতে হবে।”

মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক, সাখাওয়াত হোসেন রায়হান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল করিম জিসান, আপ্যায়ন সম্পাদক মিজানুর রহমান, উপ বিজ্ঞান ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান ও উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ইমাম উদ্দিন পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।