সোমবার চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মশিউর রহমান এই নির্দেশের পাশাপাশি আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকানোর আদেশও দিয়েছেন।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং দিয়াজের মা মামলার বাদী জাহেদা আমিন চৌধুরীর করা আবেদন নিয়ে আদালতের এই আদেশ আসে।
আসামিরা দেশত্যাগে তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে জানতে পেরে এই আবেদন করা হয় বলে দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ (সোমবার) আদালতে আসামিদের গ্রেপ্তারে নির্দেশ চেয়ে এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করি। এছাড়া সিআইডির জমা দেওয়া দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করেন আদালত।”
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ আট মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাসা থেকে উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছিল।
তাতে আপত্তি জানিয়ে হত্যা মামলা করেন তার মা জাহেদা আমিন। তার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। সম্প্রতি তার প্রতিবেদনে এটি আত্মহত্যা নয় বলে উল্লেখ করা হয়।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (বর্তমানে কমিটি স্থগিত) আলমগীর টিপু, কর্মী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরোব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমান।
দিয়াজের বোন নিপা বলেন, “শিক্ষক আনোয়ার হোসেন দেশ ছাড়ার জন্য স্কলারশিপ জোগাড়ের তোড়জোড় শুরু করেছিল। এছাড়া মামলার সাক্ষী আমাদের ভাড়া বাসার দারোয়ান তারেক মাস দেড়েক আগে ওমানে চলে গেছে।
“এসব বিষয়ে জানার পরই আমরা আদালতের নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করেছিলাম।”
মামলার ১০ আসামির প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
“তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্ট জব্দ করতে এবং বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য করা আবেদনও মঞ্জুর করেছেন আদালত,” বলেন দিয়াজের বোন আইনজীবী নিপা।
পরবর্তী শুনানির দিন ৩০ অগাস্ট রেখেছে আদালত, সেদিনের মধ্যে তদন্ত সংস্থা সিআইডিকে তদন্তের বিষয়ে জানাতে হবে।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গত ২ অগাস্ট আদালতে জমা দিয়ে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য আরও ‘সময়ের প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি হুমায়ুন কবির।
গত বছরের ২০ নভেম্বরে দিয়াজের লাশ উদ্ধারের পর তার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের প্রায় ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রকে কেন্দ্র করে দিয়াজের মৃত্যুর আগে আড়াই মাস ধরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। ওই সময় দিয়াজের বাসাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীর বাসায় হামলা ও লুটপাটও চালানো হয়েছিল।
দিয়াজের মৃত্যুর সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে বলে ছাত্রলীগের কর্মীদের একাংশের দাবি।