শত কোটির ক্ষতিপূরণ মামলা কোকেন পাচারের আসামির

ভোজ্যতেলের ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেন আনার মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি নূর মোহাম্মদ জামিনে বেরিয়ে শত কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2017, 05:13 PM
Updated : 6 August 2017, 08:30 PM

দুই বছর আগে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামেই ওই চালান এসেছিল।

তার অজ্ঞাতে নিয়ম নীতি অনুসরণ না করেই ওই চালান আনা হয়েছিল দাবি নিজের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তি এবং শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস ও চালান পাঠানো বিদেশি কোম্পানি মিলিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেন তিনি।

চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ মো. আবদুল কাদেরের আদালতে রোববার তার এবং তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই মামলা করেন আবু তৈয়ব আলী রেফাই।

বাদীর আইনজীবী মো. আবু তৈয়ব কিরণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হওয়ায় ৫০ কোটি এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক থাকায় ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৫০ কোটি মিলিয়ে মোট ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন এবং ৮ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এতে বলিভিয়ার তেল রপ্তানিকারক ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট এলাভাইভেন এসআরএল কল, চীনা মালিকানাধীন কসকো কনটেইনার লাইন্স লিমিডেট, উরুগুয়ের লোকাল এজেন্ট সাউথফ্রেইট লজিস্টিক, কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ ‘এমভি থর্ম স্ট্রিম’র লোকাল এজেন্ট পিআইএল বাংলাদেশ লিমিটেড, খানজাহান আলী লিমেটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়াকে আসামি করা হয়েছে।

সোহেল, ফজলুর ও বকুল ওই ঘটনায় মাদক ও চোরাচালান আইনের দুই মামলায়ই আসামি। এদের মধ্যে সোহেল কারাগারে থাকলেও বাকি দুইজন পলাতক রয়েছেন। ওই দুই ব্রিটিশ নাগরিক কোকেনের চালান বাংলাদেশে আনতে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

২০১৫ সালের ৭ জুন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কন্টেইনার আটকে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা ‘সূর্যমুখী তেলবাহী কন্টেইনারটি’ জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।

পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় ওই বছর ২৮ জুন চট্টগ্রামের বন্দর থানায় নূর মোহাম্মদ ও গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

ওই বছর ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সে সময়ের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে নয়জনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে অভিযোগপত্র জমা দেন। তদন্তে ত্রুটি রয়েছে উল্লেখ করে পুনরায় তদন্তে পাঠায় আদালত।

এরপর গত বছরের ১৫ জানুয়ারি নূর মোহাম্মদকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গত ১১ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।

গত ১৩ এপ্রিল র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। নুর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই তেলের সাথে কোকেন আমদানি করা হয়েছিল এবং শুরু থেকেই এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।

আইনজীবী কিরণ বলেন, “তেলের মধ্যে তরল কোকেন বিদেশ থেকে যারা এনছেন তারা আমদানির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নিয়ম মানেননি। আমদানির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার এলসিও হয়নি। খান জাহান আলী লিমিটেডের সাথে এর কোনো যোগাযোগ নেই এবং তিনি (নূর মোহাম্মদ) এ বিষয়ে অবহিতও ছিলেন না।”

তিনি বলেন, “এ চালান আমদানির কোনো মূল ডকুমেন্ট ছিল না। নূর মোহাম্মদের এতে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তাকে আসামি করা হয়। মাদক মামলায় দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রেও তার নাম ছিল না।”

চোরাচালান আইনের মামলায় পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান গত ১৪ মে যে অভিযোগপত্র দিয়েছেন, সেখানেও নূর মোহাম্মদকে বাদ রাখা হয়েছে। এতে আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়।