রোববার দুপুরে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া এবং জমির স্থায়ী বরাদ্দের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে তাদের আটক করা হয়।
পরে রাত ৮টার দিকে ভাটিয়ারি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলমের লেখা একটি অভিযোগ (এজাহার) দিয়ে আটকদের সীতাকুণ্ড থানায় পাঠানো হয়।
ছিন্নমূল পরিষদের নেতাদের আটকের কারণ জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের কয়েকশ একর এলাকায় গত এক যুগ ধরে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ৪০ হাজার মানুষের অবৈধ বসতি। পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ‘নিজস্ব জগত’।
সম্প্রতি পাহাড় ধসে ওই এলাকায় পাঁচজন নিহত হলে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সংবাদকর্মীদেরও সেখানে প্রবেশের সুযোগ হয়।
ছিন্নমূল বস্তিবাসি সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের বিরুদ্ধে পাহাড় কেটে টাকার বিনিময়ে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে জায়গা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ন্ত্রণের সুবিধার জন্য পুরো এলাকাকে ১১টি সমাজে ভাগ করা হয়েছে। ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস জঙ্গল সলিমপুরে।
রোববার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম আদালত ভবন চত্বরের একপাশে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি বিভাগের একটা কক্ষে ছিন্নমূল পরিষদের নেতাদের আটকে রাখা হয়েছে।কক্ষটির তালাবন্ধ দরজার সামনে ছিল পুলিশ পাহারা।
তিনি বলেন, “সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গত ২৯ দিন ধরে আমাদের পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই।
“আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে পেতে ও জঙ্গল সলিমপুরে বসবাসরত নিম্ন আয়ের মানুষদের স্থায়ী জমি বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি দিতে আসলে আমাদের আটক করা হয়।”
আসন্ন পূজার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “বিদ্যুৎ ছাড়া তো পূজা উদযাপন করা যাবে না। সেজন্য পূজা কমিটির একজন নেতাও এসেছেন আমার সঙ্গে। তাকেও আটক করা হয়েছে।”
নদীভাঙ্গা, রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, অসহায়, দুঃস্থ ও গরিব লোকজন জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধভাবে বসবাস করলেও ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কিছুদিন আগেই সমিতির দায়িত্ব নিয়েছেন জানিয়ে ছাদেকুর বলেন, “আমি মাত্র নতুন দায়িত্ব নিয়েছি।কে কখন কি অপরাধ করেছে ওই এলাকায় আমি সে সম্পর্কে অবগত না।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব অসহায় মানুষগুলোকে যেন জমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে থাকার অনুমতি দেন।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, ভাটিয়ারি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- আটকরা বেআইনিভাবে সরকারি সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে নিজেরা মালিক সেজে বিভিন্ন মানুষের কাছে আবাসিক প্লট বিক্রি করছেন। এছাড়া তারা ওই এলাকাকে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভয়রাণ্যে পরিণত করেছেন।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসান রাতে বলেন, “জেলা প্রশাসন থেকে এজাহারসহ আটজনকে থানায় পাঠানোর কথা ফোনে জানানো হয়েছে। এজাহার হাতে পাওয়ার পর আটকদের আমরা গ্রেপ্তার দেখাব।”