‘ন্যায্য কর দেন না, অথচ সমালোচনা করেন’

ভাড়ার সঠিক তথ্য গোপন করে গৃহকর ফাঁকি দেওয়া বাড়ির মালিকদের সমালোচনা করেছেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 01:46 PM
Updated : 27 July 2017, 01:52 PM

তিনি বলেছেন, ন্যায্য গৃহকর না দিলেও অনেক বাড়ির মালিক শহরের ভাঙ্গা-অন্ধকার সড়ক ও দুর্গন্ধ নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়েন না।

বৃহস্পতিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) রাজস্ব বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সালের কর্মপরিকল্পনা ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মেয়র।

গৃহকর কম দেওয়ার উদাহরণ দিয়ে নাছির বলেন, “একটা অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া যদি হয় ৩০ হাজার বা ৪০ হাজার টাকা সেখানে মালিক বলছেন দশ হাজার টাকা। এভাবে ৫০ বা ৬০ শতাংশ বেনিফিট নিচ্ছেন।

“এরপরও যে গৃহকরটা আসে সেটাও দিতে চান না। আবার উনারাই সমালোচনা করেন, এ রাস্তাটা কেন ভাঙ্গা, এ এলাকায় দুর্গন্ধ; এখানে কেন লাইট জ্বলছে না।”

বাড়ির মালিকরা এই ‍সুবিধা নেওয়ার পরও সন্তুষ্ট না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই বেনিফিট উনারা নিচ্ছেন। এরপরও সন্তুষ্ট না। এটাই অবাক করা কাণ্ড।”

মালিকরা প্রতিবছরই বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যদি আগে টিনশেডে থাকত, সেখানে একটি দশতলা ভবন করেছে, তাহলে তার তো ট্যাক্স বাড়বে।”

সিসিসি রাজস্ব বিভাগ অনুমিত ভাড়ার উপর গৃহকর নেন না জানিয়ে মেয়র বলেন, “আমাদের যারা কর মূল্যায়ন করতে যান তারা কাউকে বলতে পারেন না যে আপনার ভবনের ভাড়া এত টাকা।

“ওনারা যেটা বলেন সেটার ভিত্তিতে আমরা কর আদায় করি। এখন কোন বাড়িওয়ালা কি বলতে পারবে যে তারা স্বতস্ফূর্তভাবে (ভাড়া সম্পর্কে) সঠিক তথ্যটা প্রদান করেন? আমরা, আপনারা সবাই জানি এ শহরের কোন এলাকায় কত টাকা বাসা ভাড়া”।

শহরের সুস্থ পরিবেশে জীবনযাপন করতে হলে পৌরকর দিতে হবে- এ সংস্কৃতি তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন মেয়র।

ট্যাক্স দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে ‘পাই টু পাই’ সেবা বুঝে নিতে তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

১৯৮৫ সালের গেজেট অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট করার সুযোগ থাকলেও সেটা দীর্ঘদিন করা হয়নি বলে স্মরণ করিয়ে দেন মেয়র ।

জলাবদ্ধতা এক-দুই বছরে সমাধান হওয়ার নয়

সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী সময় প্রয়োজন জানিয়ে আ জ ম নাছির বলেন, “সবার সাথে কথা বলে যেটা বুঝেছি জলাবদ্ধতা এখন যে জায়গায় রয়েছে সেটা এক বা দুই বছরে সমাধান হবে না।

“কেউ যদি ধারণা করেন যে আমি এক বা দুই বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার সমাধান করে ফেলব আমি বিনয়ের সাথে তার ধারণার সাথে ভিন্নমত পোষণ করব।”

চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলেই ডুবছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। সম্প্রতি হাঁটু পানিতে জলমগ্ন নগরী দেখতে বেরিয়েছিলেন তিনি।

জলাবদ্ধতা দূরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই বছর আগে চট্টগ্রামের মেয়র পদে আসীন হওয়া নাছির বন্দর নগরীর এই সমস্যা সমাধানের জটিলতা উপলব্ধি করে সম্প্রতি বলেছেন, “জলাবদ্ধতা নিরসন অত সহজ না। কেউ যদি বাইরে থেকে মনে করেন, তাহলে হবে না।”

চট্টগ্রাম শহরকে বর্ধিত করার প্রয়োজন থাকলেও সেটা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “সাবেক মেয়র শ্রদ্ধেয় এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরকে বর্ধিত করার উদ্যোগ নিলেও আইনি জটিলতার কারণে তিনি সফল হননি।

“আজকে যদি শহর বর্ধিত হত শহরের উপর এত চাপ তৈরি হত না। এখন শহরের উপর প্রতিদিনই চাপ তৈরি হচ্ছে। জলাধার সবগুলো স্থাপনা হয়ে গেছে। কল্পলোক এক ও দুই, যেখানে চাক্তাই খালের পানি বেশি হলে জমা থাকত। এখন ওখানে পানি থাকার আর কোনো সুযোগ আছে?”

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নেওয়া আবাসন প্রকল্পে নগরীর বেশকিছু জলাধার ভরাট হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। বক্তব্য রাখেন সিসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান।