দুই বছর গড়ালেও সেই দুর্ভোগের অবসান ঘটেনি। ভারি বর্ষণ হলেই তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর অনেক এলাকা।
এখনও কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকার মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মেয়র নাছিরের আয়োজিত অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়ার খবর আসে।
সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুর রহিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ জুলাইয়ের ওই অনুষ্ঠান পেছানোর কথা জানানো হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া’কে কারণ দেখানো হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ওই সুধী সমাবেশ ৩১ জুলাই হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মেয়র নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবহাওয়া ভালো নয়, খুব বৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতা ইসহাক মিয়া মারা গেছেন। আগামীকাল উনার জানাজা হবে। সব মিলিয়ে ৩১ তারিখ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।”
আগামী ৩০ জুলাই সিসিসির বাজেট ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস। লাগাতার বর্ষণে নগরীর নতুন বেশ কয়েকটি সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল ও ভূমি ধসে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। কোথাও কোথাও আভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পাহাড়ি ঢলে এক ব্যক্তি ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজানে পাহাড়ি ঢল এবং নদীর পানি উপচিয়ে ফসলি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের সকালের বাজার এলাকায় ঝড়ো বাতাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গণ্ডামারা ইউনিয়নের উত্তর বড়ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গন্ডামারা ব্রিজ পর্যন্ত জলকদর খালের বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
বোয়ালখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙনে ফসলী জমির পাশাপাশি বাড়ি-ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।
বোয়ালখালী চরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাহাড়ী ঢলে নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত জোয়ারে কালুরঘাট-ভান্ডালজুড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সড়কের সিরাজী স্কুল এলাকা থেকে চরণদ্বীপ দরবার শরিফ পর্যন্ত এলাকায় চার থেকে পাঁচশ’ ফুট নদীর পানিতে ভেসে গেছে।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফটিকছড়িতে হালদা নদী ও ধুরং খালের পানিতে তলিয়ে গেছে সাতটি ইউনিয়নের ফসলি জমি।
সাতকানিয়ার বাজালিয়া ও পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বাজালিয়া এলাকায় বান্দরবানের সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ অতিরিক্ত পানির কারণে কিছু সময় বন্ধ ছিল।
চন্দনাইশ উপজেলায় শঙ্খ নদীর ভাঙনের কারণে পাঁচটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের কয়েকটি ইউনিয়নও প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে প্রবল বর্ষণে প্রাণহানি ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদে ও আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।