নতুন পদ্ধতিতে শহুরে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ভালো করলেও মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ফলাফলে বেশি প্রভাব পড়েছে, বলছেন তারা।
এবছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার কমে গেছে গতবারের চেয়ে সাড়ে তিন শতাংশ পয়েন্ট। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে প্রায় অর্ধেক।
গতবছর এ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, আর এবছর ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৯১ জন; গতবছর ছিল দুই হাজার ২৫৩ জন।
ফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান জানান, এবছর সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করেছে আইসিটি বিষয়ে। এ বিষয়ে গতবছর পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ১৪ শতাংশ; যা এবছর ৮২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এবছর আইসিটি বিষয়ে মানবিক বিভাগ থেকে পাসের হার ৭১ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা গতবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ পয়েন্ট কম। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে আইসিটি বিষয়ে এবছর পাস করেছে ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী, গতবার পাস করেছিল ৮৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
তবে বিজ্ঞান বিভাগে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি আইসিটির ফলাফল। গত বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আইসিটি বিষয়ে ৯৭ দশমিক ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবছর কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব বলেন, “আইসিটি বিষয়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীরা বেশি খারাপ করায় ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।”
এদিকে নতুন প্রশ্ন পদ্ধতির কারণে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে বলে মনে করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান।
তিনি জানান, এবছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৩৯১ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, “আগে ৬০ নম্বর সৃজনশীল ও ৪০ নম্বর বহু নির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও এবছর বহু নির্বাচনী থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে করা হয়েছে ৩০। আর সৃজনশীল হয়েছে ৭০ নম্বরে।
“এছাড়া ব্যবহারিকসহ পরীক্ষাগুলোতে ৫০ নম্বর সৃজনশীল আর ২৫ নম্বর করে বহু নির্বাচনী ও ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
মফস্বলে জিপিএ-৫ কম
প্রশ্নপদ্ধতির পরিবর্তনে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে বলে মনে করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান।
“এমসিকিউ পদ্ধতিতে যত সহজে নম্বর তোলা যায় সৃজনশীলে তত সহজে নম্বর পাওয়া যায় না। আর এ কারণে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে বলে আমার ধারণা,” বলেন তিনি।
একারণে মফস্বলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে শহুরে শিক্ষার্থীরাই ভালো ফলাফল করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি জানান, কক্সবাজারে ৩৮ জন, বান্দরবানে ১০ জন এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে চারজন করে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর অন্যরা সবাই বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায়।
এরপর ক্যন্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ১২১ জন, সরকারি সিটি কলেজ থেকে ১০১ ও সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ৮৯ জন করে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শহরের বাইরে থেকে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া কলেজগুলোর মধ্যে একটি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ৪৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এছাড়া সরকারি পটিয়া কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ জন।
এর বাইরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ৩৫ জন, বান্দরবান ক্যান্টমেন্ট কলেজ থেকে ১০ করে জিপিএ-৫ পেলেও
চট্টগ্রাম জেলা ও তিন পার্বত্য ও কক্সবাজার জেলার অন্য কোনো কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছায়নি।
পার্বত্য জেলায় পাশের হার কম
চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায়ও এবার পাসের হার কমেছে। রাঙামাটি জেলায় এবার পাস করেছে ৪৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, গতবারে এ হার ছিল ৪৭ দশমিক ১৪।
সবচেয়ে বেশি পাশের হার কমেছে খাগড়াছড়ি জেলায়। এবার এ জেলা থেকে পাস করেছে ৪৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার পাস করেছিল ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
বান্দরবানেও গতবারের চেয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ পাসের হার কমে এবার হয়েছে ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ।
কক্সবাজার জেলায় এবার পাস করেছে ৫৫ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গতবার ছিল ৬৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এর বাইরে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৬০ দশমিক ২৩ শতাংশ।
শুধু মহানগরীতে এবার পাস করেছে ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ।