র‌্যাবকে ‘আল্লাহর রহমত’ বললেন এমপি লতিফ

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে র‌্যাবকে বাংলাদেশের জন্য ‘আল্লাহর রহমত’ বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2017, 12:54 PM
Updated : 15 July 2017, 01:41 PM

শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদের উপস্থিতিতে বাহিনীটিকে উচ্চ প্রশংসায় ভাসান এই ব্যবসায়ী।

লতিফ বলেন, “র‌্যাব সন্ত্রাসীর জন্য আতঙ্কের নাম, সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির নাম।

“র‌্যাবকে আমি এভাবে এব্রেভিয়েট করি- ‘আর’ অর্থ রহমত, ‘এ’ অর্থ আল্লাহ, ‘বি’ ফর বাংলাদেশ- রহমত অব আল্লাহ ফর বাংলাদেশ, আরএবি (র‌্যাব)।” 

পতেঙ্গায় র‌্যাব-৭ এর কার্যালয়ে ‘মাদকদ্রব্য ধ্বংস কর্মসূচি’ উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফ।  

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনায় থাকা র‌্যাবের পক্ষ নিয়ে এই আইন প্রণেতা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষেও অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, “পুলিশ বা র‌্যাব যখন ওই নরপশুগুলোকে ‘হান্ট ডাউন’ করে তখন আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনের টক শো তে বসে সমালোচনা করতে থাকে- বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে।

“বিনা বিচারে কোনো মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে না। বিনা বিচারে যাদের হত্যা করছে, তারা মানুষরূপী পশু। একেকজন অপরাধীর নামে একাধিক মামলা থাকে। ১০, ২০, ১৫ এরকম অনেকের অনেক মামলা থাকে।

“কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে এসমস্ত অপরাধীগুলো বেরিয়ে আসে। অন্য কোনোভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নাই বিধায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে এসমস্ত গুরুতর অপরাধীগুলোকে ‘হান্ট ডাউন’ করার মধ্য দিয়ে তাদের মনে সন্ত্রাসের জন্ম দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য স্বস্তির সৃষ্টি করতে হয়। দেশের মানুষ তাদের জন্য দোয়া করে। সেই ‘হান্ট ডাউনটা’ র‌্যাব করুক, আর পুলিশ করুক।”

এসময় উপস্থিত র‌্যাবের মহাপরিচালকের উদ্দেশে লতিফ বলেন, “অনন্য ভূমিকার জন্য মহাপরিচালককে জনগণের পক্ষ থেকে ‘লাল সালাম’ জানাই।”

সমালোচনার মুখে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বরাবরই বলে আসছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নিজ দলের সংসদ সদস্য লতিফের বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলেননি।

তবে তিনি লতিফকে ‘দক্ষ ব্যবসায়ী’, ‘অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ’ ও ‘ভোটে জয়ী জনগণের প্রিয় নেতা’ বলে অভিহিত করেন; যদিও তিনি চট্টগ্রামে নিজের দলের মধ্যেও সমালোচিত। 

বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে লতিফের ছবি নিয়ে এমন প্রতিবাদ ছিল ছাত্র ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের (ফাইল ছবি)

সমালোচকদের উদ্দেশে লতিফ বলেন, “যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা ওই নরপশুদের পক্ষ নিয়ে আইনের প্রশ্ন তোলেন, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই- আজকে আমার ভাই, বোন, বাবা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হল, অপহৃত হল, তাদের ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কী?

“সেই নরপশুগুলোকে পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য যখন কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় কোর্ট থেকে বেল নিয়ে যখন বেরিয়ে আসে, আবার দ্বিগুণ উৎসাহে সমাজের মধ্যে তারা সন্ত্রাস ছড়াতে থাকে, তখন ওই বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধি কি তাদের সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে পারে? অবশ্যই পারে না।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের কাজের প্রশংসা করে লতিফ আরও বলেন, “তাদের ঘুমের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। অনেক ব্যতিক্রম হয়। অনেক সদস্য ডিরেইল হয়ে যায়। কিন্তু টোটালি তাদের এক্টিভিটিজগুলো দেখলে আমরা এপ্রিসিয়েট না করে পারি না।

“তাদের খাওয়া-দাওয়া, নাওয়ার কোনো স্টেশন থাকে না। সারাদিন তাদের ছুটতে হয়। এবং অব্যাহত ছুটতে ছুটতে একেক সময় তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত পর্যন্ত হয়ে যায়।”

মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে আগামীতেও ‘সার্বিক সমর্থন’ দেবেন বলে মন্তব্য করেন লতিফ।