তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ‘বিস্তারিত আলাপ’ বাবুল আক্তারের 

সাত মাস পর চট্টগ্রামে গিয়ে স্ত্রী হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2017, 10:20 AM
Updated : 11 July 2017, 04:15 PM

মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন।

ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে বাবুল টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগেও চট্টগ্রাম এসেছি, আইওর সাথে সরাসরি ও টেলিফোনে কয়েক দফা কথা বলেছি।

“কিন্তু এবারই ইনডিটেইল আলাপ হয়েছে; ঘটনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। তদন্তের বিষয়ে ও ঘটনা নিয়ে আমার কিছু অবজারভেশন আইওকে বলেছি।”

গত বছরের ৫ জুলাই মাহমুদা আক্তার মিতু খুন হওয়ার পর সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন মামলার বাদী বাবুল।

এরপর বিভিন্ন সময়ে বাবুলের বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি চট্টগ্রামে এসে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন। এক পর্যায়ে বাবুলের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহের কথাও তোলেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ নিয়েও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে বাবুল বলেন, “আগের বক্তব্য ও পরের বক্তব্য মিল নেই কেন- সেসব বিষয়ে আইও জানতে চেয়েছেন এবং আমি আমার অবস্থান বলেছি।”

তদন্ত কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাবুল একই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, “অভিযোগ যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে করতে পারে। এটা আইনেই করার অধিকার আছে। তদন্ত সাপেক্ষে, সাক্ষ্য-প্রমাণে সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।”

এই অভিযোগের বিষয়ে নিজেকে ‘নির্দোষ’ মনে করেন কি না- এ প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘অবশ্যই’ বলেই গাড়িতে উঠে যান।

বাবুল আক্তার

বেলা পৌনে ৪টার দিকে কালো রঙের ওই গাড়ি নিয়েই চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দপ্তরে আসেন বাবুল, যেখানে এক বছর আগে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

গাড়ি থেকে নেমেই গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কক্ষে ঢোকেন তিনি।

বাবুল চলে যাওয়ার পর কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “বাবুল আক্তার মামলার বাদী। তদন্তের কারণে তাকে ডাকা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয়ে ‘ক্রস চেক’ করার দরকার সেগুলো করেছি।”

আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইট ইজ কন্টিনিউয়াস প্রসেস। যথা শিগগির সম্ভব তা দেওয়া হবে।”

গত বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাবুলের স্ত্রী মিতুকে।

চট্টগ্রাম থেকে বাবুল পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্ত্রী হত্যার পর থেকে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরবাড়িতে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে উঠেছিলেন বাবুল। এক পর্যায়ে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নানা গুঞ্জন ছড়ায়। তার চাকরি হারানোর খবরও আসে।

নানা রাখঢাকের পর ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের চাকরি থেকে বাবুলকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন হয়। তাতে বলা হয়, বাবুল নিজেই চাকরি ছেড়েছেন।

এর মধ্যে শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা বাসায় ওঠেন বাবুল।

এরপর শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে বাবুলের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহের কথা জানানো হয়। পাশাপাশি আরেক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অভিযোগও ওঠে।

তবে বাবুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, এক শ্যালিকাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এসব কথা ছড়াচ্ছে শ্বশুর বাড়ির লোকরা।