‘নীরব থাকি বলেই তিল থেকে তাল হয়েছে’

পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি স্থাপন ঠেকানো নিয়ে নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরা দুই কর্মকর্তাকে তিরস্কার করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2017, 04:16 PM
Updated : 10 July 2017, 04:16 PM

সোমবার পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সপ্তদশ সভায় রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আতাউল হক ভুঁইয়া এবং সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়া পাহাড়ে অবৈধ দখল নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন।

তখন ক্ষোভ জানিয়ে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান বলেন, “ইনফরমাল শক্তির কাছে আমরা নীরব থাকি।

“বিভিন্ন সংস্থার লোকজন অবহেলা করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। কয়জনকে উচ্ছেদ করেছে? তাই তিল থেকে তাল হয়েছে। অবৈধ দখলদার তিনশ থেকে তিন হাজার হয়েছে। উচ্ছেদ শুরু হলে ঠিকই যার যার পথ ধরবে।”

সভার শুরুতে পাহাড়ে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদে অংশ নেওয়া দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনাকারীদের সরে যেতে মাইকিং করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়।

ক্ষোভ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “এখন দুইটা অপশন আছে। হয় বারবার পাহাড় ধস হবে, আমরা পরিস্থিতি ট্যাকল দিব। অথবা এসব বন্ধ করতে হবে।

“পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে তাদের জীবন ঝুঁকিতে অথচ সর্তক করাও যাবে না। মাইকিং করতে গেলে বলে- পাহাড়ে উঠবে না, উঠলে সমস্যা হবে!”

এরপর রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আতাউল হক ভুঁইয়া বলেন, বাটালি হিল-মতিঝর্ণার কথা সবাই জানে। কিন্তু ফয়’স লেকের ভেতরে কনকর্ড এর নাম দিয়ে পাঁচ-ছয় হাজার পরিবার বসবাস করছে।

“পাহাড় কেটে টুকরো টুকরো করেছে। দুর্ঘটনা হলে হাজারো মানুষের প্রাণ শঙ্কায় পড়বে। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলে কনকর্ড তাদের থাকতে দিয়েছে।”

এরপর জেলা প্রশাসক বলেন, পাহাড়ের মালিক যিনি দায়িত্বও তার। ওই পাহাড়ের মালিক তো রেলওয়ে।

“তাহলে আপনি কীভাবে এসব বলেন? আমরা বুঝি। কনকর্ডের সাথে রেলওয়ের চুক্তির ব্যত্যয় হলে বাতিল করতে পারেন। রেলওয়ের সচিবসহ অনেকের সাথে আগে কথা বলেছি। তারা কখনও কিছু বলেনি। রেলওয়ে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিক। সহায়তা করব।”

সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, “সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর অত্যন্ত দুর্গম। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যান কিছুদিন আগে প্রথমবারের মত আমার সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন।

“সেখানে দখলদাররা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। কয়েকজন অধিপতি আছে। রাবিশ ফেলে, পাহাড় কেটে বায়েজিদ-শেরশাহ মধ্যবর্তী এলাকায় পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে তারা ১০ কিলোমিটার রাস্তা করে ফেলেছে। সেখানে যে অবস্থা, সিডিএ ফেল। ভোলা, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, নোয়াখালীর হাজার হাজার মানুষ সেখানে।”

এসময় তাকে থামিয়ে দিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, “প্রশাসন কি তার কাজটা করেছে? সেখানে কার জায়গা যে বাড়িঘর বানিয়ে ফেলবে? কে বানিয়ে ফেলবে?

“রাষ্ট্রের জায়গায় ঘর বানাতে মুসা বিন শমসেরও তো পারবে না। রাষ্ট্র তো বাধা দেবে। গত এক বছরে কী কাজ করেছ? এসি ল্যান্ড, ইউএনও কোথায় ছিল? এত বড় নগর-শহর হয়ে যাচ্ছে সেখানে। জেলা প্রশাসন একটা চিঠি দিলেও তো আঁতকে উঠত।”

বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন বলেন, “একটা চিঠিও কি আমরা দিয়েছি? কাগজ-কলম খরচ হয়েছে?”

জেলা প্রশাসক বলেন, “আমি কিছু জানি না। আগের ডিসি জানেন না। আবার বলছে- সিডিএ ফেল।

এসব বলার কী মানে?”

এরপর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সীতাকুণ্ডের ইউএনও’র উদ্দেশে বলেন, “ছলিমপুরে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিন। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব।”

‘আইনজীবীদের ভবনই অনুমোদনহীন’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও আদালত ভবন নগরীর পরীর পাহাড়ে।

বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথরাইজেশন অফিসরা মোহাম্মদ শামীম বলেন, “যে পরীর পাহাড়ে আমরা এখন আছি সেখানেই অনুমতি ছাড়া ভবন নির্মাণ করেছেন আইনজীবীরা।

“কয়েকদিন আগে প্রবল বৃষ্টিতে আইনজীবীদের একটি ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে গিয়ে পড়েছে।”

জবাবে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান বলেন, “উনাদের (আইনজীবীদের) সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। জিজ্ঞেস করেছি- জমি কার? জমির মালিকের অনুমতি আছে? ভবনের অনুমোদন নিয়েছেন? প্রত্যেকটা উত্তরই ছিল নেতিবাচক।

“তাদের বলেছি- এগুলা আমি ভাঙতে চাচ্ছি না। ভাঙতে হয়ত পারবও না। আপনারা ল প্র্যাকটিস করেন, তাই আইন মানা উচিত ছিল।”

সিডিএ কর্মকর্তার উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, “অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা দিন। আল্লাহ না করুক, ক্রুটিপূর্ণ হলে এসব ভবনও ধসে পড়তে পারে।”

পরীর পাহাড়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মালিকানাধীন এনেক্স-১ ও ২ নামের দুটি ভবন আছে। এছাড়া আরও দুটি নতুন ভবন নির্মাণাধীন।