চট্টগ্রামে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ চান নাছিরও

বন্দর নগরীর উন্নয়নে দুই পূর্বসূরি মহিউদ্দিন ও মনজুরের মতো বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও ‘সিটি গভর্নেমেন্ট’র কথা বলেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2017, 05:26 PM
Updated : 21 June 2017, 05:26 PM

বুধবার নগর ভবনে চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ইফতার অনুষ্ঠানে এই ভাবনার কথা জানান তিনি।

আলোচনায় নগরীতে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ‘সমন্বয়ের’ উপর গুরুত্ব দেন মেয়র।

নাছির  বলেন, “একসাথে ওয়াসা তিন-চারটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে চার বছর, মানে ২০২১ পর্যন্ত সময় লাগবে। আমি কি তাহলে বসে থাকব চার বছর?

“আর শুধু তো ওয়াসা করছে না, এই শহরে সিডিএ কাজ করছে। পিডিবি একটা বড় প্রকল্প নিয়েছে, আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল। টিঅ্যান্ডটিও একই। মাটির নিচে দিয়ে তাদের লাইন যাবে। তারপর হলো কর্ণফুলী গ্যাস।”

নাছির বলেন, “এসব কাজ সমন্বয় করতে হবে। মোদ্দাকথা হলো- এটা সিটি গভর্নমেন্ট করতেই হবে।

“এগুলো (বিভিন্ন সরকারি সংস্থা) প্রত্যেকে আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয়। সিডিএ হলো গণপূর্ত, পিডিবি- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। যদি বলতেন- মেয়রই চট্টগ্রাম শহরের সব, পানি বলেন, বিদ্যুৎ বলেন, আইন-শৃঙ্খলাও মেয়র, তাহলে হয়ত…. ”  

এর আগে ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন আয়োজিত সুধী সমাবেশে সিটি গভর্নমেন্টের দাবি উঠেছিল।

ওই অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি গভর্নমেন্ট গঠনের কথা বললে তাতে সুর মিলিয়েছিলেন মনজুর আলম।

‘গুরু’ মহিউদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মনজুর বলেছিলেন, “আমিও এখন সিটি গভর্নমেন্ট চাই। এটা না হলে অনেক কিছুতেই আমরা পিছিয়ে থাকব।”

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ‘গুরু-শিষ্য’ হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন-মনজুরের পর এবার মহিউদ্দিনের বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত নাছিরও মেয়র পদে বসার দুই বছর পূর্তির আগেই একই দাবি জানালেন।

১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিন বার চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হওয়া মহিউদ্দিন তার মেয়াদে এই দাবি প্রথম তুলেছিলেন।  

সিটি গভর্নমেন্ট ইস্যুতে মহিউদ্দিন-মনজুরের সুরে কথা বললেও ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’ আদায়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান নাছির।

“ট্যাক্স নিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা হচ্ছে। এটা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। সিটি করপোরেশন ট্যাক্স ধার্যই করে না। ট্যাক্স বাড়ানোর ক্ষমতা সিটি করপোরেশনের নেই। এখনো ১৯৮৫ সালের হারে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে।”

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ও নিম্নচাপের প্রভাবে বন্দর নগরীতে ভারি বর্ষণের পর দেখা দেওয়া জলাবদ্ধতায় সমালোচনার মুখে থাকা নাছির মনে করেন এ সমস্যা ‘সমাধানযোগ্য’।

তিনি বলেন, “জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান অযোগ্য নয়। জলাবদ্ধতা এখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিছু ড্রাস্টিক (বড় ধরনের) পদক্ষেপ নেওয়া গেলে জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকাংশে নিরসন সম্ভব।

“চট্টগ্রাম শহরে অনেকগুলো খাল। এরমধ্যে কিছু নদীর সঙ্গে আর কিছু সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত। সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে যে জলাবদ্ধতা হয়, সেটার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।”

জলাবদ্ধতা ‘নিরসনে’ এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন মেয়র।  

নগরীতে যেসব ‘সিল্ট ট্র্যাপ’ (বালি আটকানোর ব্যবস্থা) ছিল সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

মহেশখালের বাঁধ অপসারণের পর নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ও আগ্রাবাদ-হালিশহরের একাংশ দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে ভাসছে বলে আলোচনায় জানান এক সংবাদকর্মী।

জবাবে মেয়র বলেন, “গত কয়েকদিন নিয়মিত ওই এলাকায় গিয়েছি। ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন খুব খুশি। আগ্রাবাদবাসী আরও কিছুদিন ভুগবে। সেটা এক থেকে সোয়া এক বছরও হতে পারে বলে ধারণা করছি।”

“এক্সেস সড়কে কোনো ড্রেন নেই। সড়ক প্রশস্থকরণ ও ড্রেন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি মহেশখালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে।”