পাহাড়ে অবৈধ বসতির পৃষ্ঠপোষকদের বিচার দাবি

পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনে পৃষ্ঠপোষকতাকারী ‘ক্ষমতাবানদের’ চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2017, 05:28 PM
Updated : 18 June 2017, 05:28 PM

তাদের বিচারের আওতায় না আনলে আগামীতেও নিয়মিত বিরতিতে ‘প্রকৃতির এই প্রতিশোধ’ (পাহাড় ধস) চলতে থাকবে বলে সতর্ক করছেন তারা।      

রোববার নগরীতে পাহাড় রক্ষা ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর দাবিতে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব বলেন।

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় রোববার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়েছে।

ভূমি ধস যেসব এলাকায় ঘটেছে, তার প্রায় প্রতিটি স্থানেই পাহাড় কাটা এবং গাছ উজারের চিহ্ন হিসেবে ন্যাড়া পাহাড় দেখা গেছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান।

সমাবেশে তিনি বলেন, “পাহাড়ে যারা অবৈধ বসতি স্থাপনে শক্তি যোগাচ্ছে, সেই ক্ষমতাবানদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পাহাড় দখল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন ঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করে শাস্তি দিতে হবে।

“এসব কাজ দ্রুত না হলে চট্টগ্রামে কোনো পাহাড়ের অস্তিত্বই আর থাকবে না। এর বিপরীতে নিয়মিত বিরতিতে চলবে প্রকৃতির প্রতিশোধ। পাহাড়কে বাঁচাতে না পারলে, মানুষও স্বস্তিতে বাঁচতে পারবে না।”

চট্টগ্রামে ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষ নিহতের পর গঠিত তদন্ত কমিটির ৩৬ দফা সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি অভিযোগ করে চট্টগ্রাম নগরী ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় কাটা বন্ধে একটি টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানান শরীফ।

মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ও প্রকৃতির প্রত্যাঘাত থেকে অসহায় মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে পুরো জনপদই বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন পিপলস ভয়েস সভাপতি।

বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই মানববন্ধন ও নাগরিক সমাবেশে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “আমরা দাবি করি- সভ্য হয়েছি, মানবিক হয়েছি। কিন্তু আমাদের আচরণ তা প্রমাণ করে না।

“১০ বছর আগে এই চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পরও পাহাড় কাটা থামেনি। প্রতিদিন নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলেছে। তাই এক দশক পর পুরো চট্টগ্রামজুড়ে পাহাড় ধসে ভয়াবহ এই বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটল।”

প্রাকৃতিক নয়, মানুষের অবিবেচক কর্মকাণ্ডের কারণেই পাহাড়ে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা।

তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলতে চান- প্রাকৃতিক কারণে পাহাড় ধস হয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। এই বিপর্যয়ের কারণ মানুষের লোভ।

“বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণেই এই ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে এ রকম বিপর্যয় আরও ঘটতে পারে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে গত ১৩ জুন পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অন্যদের মধ্যে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, প্রকৌশলী রূপক চৌধুরী, অধ্যাপক শিব প্রসাদ শুর, সংস্কৃতিকর্মী সুনীল ধর, উন্নয়নকর্মী এস এম এরশাদুল করিম এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স সমাবেশে ছিলেন।