নার্সের কাজে ওয়ার্ডবয়, শঙ্কায় রোগীর স্বজন

চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুসরণ করে রোগীকে ইনজেকশন দেয়া ও ক্যানুলা পরানোর দায়িত্ব নার্সদের হলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই কাজ করছেন ওয়ার্ড বয়রা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোমোস্তফা ইউসুফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2017, 02:59 PM
Updated : 16 June 2017, 08:17 PM

গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে ভর্তি হন নিউমোনিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা আবদুল মজিদ।

৭৫ বছর বয়সী এই রোগী আসার পরপরই ওই বেড ঘিরে জটলা করেন কয়েকজন ওয়ার্ডবয়। তাদের একজন মজিদের হাতে ক্যানুলা লাগাতে বার বার সুঁই ফুঁড়েও ব্যর্থ হচ্ছিলেন।

অন্য একজন ওয়ার্ড বয় একটি ইনজেকশনের অ্যাম্পুল ভেঙে সিরিঞ্জে নিচ্ছিলেন।  বার বার ক্যানুলার সুঁই ঢোকানোয় ব্যথায় আর্তনাদ করছিলেন আবদুল মজিদ।

এসময় তার বড় ছেলে মো. সুলতান কয়েকবার নার্স রুমে গিয়ে তাদের আসার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে একজন নার্স এলেও তিনি কোনো কাজে হাত লাগাননি।

‘ওয়ার্ডবয়রা পারবে’ এমন আশ্বাস দিয়ে কর্তব্যরত দুজন নার্স মোবাইলে গান শোনা ও ফেইসবুকিংয়ে সময় কাটান বলে অভিযোগ করেন সুলতান।

ওই রাতে হাসপাতালে উপস্থিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদককে সুলতান বলেন, “আমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। ওয়ার্ডবয়দের দেওয়া ক্যানুলা ও ইনজেকশন যদি ভুল হয় তাহলে যে কোনো সময় সংকটাপন্ন রোগী মারা যেতে পারে। তখন দায় নেবে কে?”

এরপর এই প্রতিবেদক দুই ওয়ার্ডবয়ের কাছে ইনজেকশন দেওয়া এবং ক্যানুলা লাগানো তাদের দায়িত্ব কি না জানতে চাইলে একজন সটকে পড়েন। অন্যজন নিজের নাম রুবেল বলে জানান।

রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোগী আসলে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।”

রোগীর স্বজনের ডাকাডাকিতে একজন নার্স তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেও ওয়ার্ডবয়ের ইনজেকশন দেওয়া দেখে চলে যান তিনি।

এভাবে ক্যানুলা পরানো ও ইনজেকশন দেওয়ার প্রশিক্ষণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখতে দেখতে শিখে গেছি।”

এ সময় ওয়ার্ডবয়দেরই ওই ওয়ার্ডে ভর্তি আরও কয়েকজন রোগীকে ইনজেকশন ও ক্যানুলা পরানোর কাজ করতে দেখা যায়।

এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালটির ১৩, ১৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রাতের দিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেডের চারপাশে ওয়ার্ডবয়দের ভিড়।

তাদের মধ্যে ‘অভিজ্ঞরা’ ক্যানুলা ও ইনজেকশন দেয়ার কাজটা করেন। বাকিরা দেখে দেখে শেখেন বলে জানান ওয়ার্ডবয়রা।

নার্সদের উপস্থিতি সত্ত্বেও ওয়ার্ডবয়দের এসব কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জালাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়ার্ডবয়রা যদি এ কাজ করে থাকে তাহলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ। এ কাজ তারা কখনোই করতে পারে না। ”

“এ ধরনের ঘটনায় আগেও আমি কয়েকজনকে শাস্তি দিয়েছি। ওয়ার্ডবয়ের কাজ ওয়ার্ডবয় করবে, ডাক্তার ও নার্স যে যার দায়িত্ব পালন করবে। আমি এদের বিরুদ্ধে সিরিয়াস ব্যবস্থা নেব।”

চট্টগ্রাম মেডিকেলে আইসিইউতে জায়গা না হওয়ায় আবদুল মজিদকে পরদিন দুপুরে নেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে মারা যান তিনি।