ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না: কাদের

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2017, 06:31 AM
Updated : 15 June 2017, 09:09 AM

বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার এলাকার মতিঝর্ণায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে কোনো পলিটিক্যাল প্রভাব সহ্য করা হবে না।

“লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের ব্যাপার।  তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকিময় জীবন থেকে তাদের উদ্ধার করার সময় কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আসলে সেটা কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণেই পাহাড়ে বসতি উচ্ছেদ সম্ভব হয় না বলে জেলা প্রশাসন ও পাহাড় রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী পরিবেশবাদীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

ওবায়দুল কাদের বলেন,  মানুষ বেঁচে থাকলেই তো জীবিকা।  জন প্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা দায়িত্ব। জীবন রক্ষার জন্য তাকে সরিয়ে নিতে হবে। জোর করে সরিয়ে নিতে হবে।’

“আপনার এটাকে উচ্ছেদ বলছেন। আমি উচ্ছেদ বলতে চাই না। তাদের উদ্ধার করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ জীবন থেকে লোকগুলোকে উদ্ধার করতে হবে, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে।”

উচ্ছেদের পাশাপাশি তাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন তিনি।

সড়কমন্ত্রী বলেন, যেসব এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে সেখানে কেউ যেতেও পারছে না। শুধু শহর নয়, গ্রামেও যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে সেখান থেকে তাদের অনতিবিলম্বে সরাতে হবে এবং বিকল্প পুর্নবাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাহাড়ে বসতিতে অবৈধভাবে গ্যাস ও পানির সংযোগ দেওয়া হয় এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। আমরা কিছু লোক যদি চেষ্টা করি তা বন্ধ করা সম্ভব।”

পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসতিকে ধসের অন্যতম প্রধান কারণ উল্লেখ করে কাদের বলেন, সেখানে যারা বসবাস করছে গরীব মানুষ। তারা জানে তাদের থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। যার যার সম্বল ছেড়ে কেউ যেতে চায় না।

রাঙামাটির কয়েকটি জায়গা থেকে ধসের ১০ মিনিট আগেও সেনাবাহিনী চেষ্টা করেও লোকজন সরাতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা মানসিকতা, সাইক্লোনেও দেখা যায় অনুরোধ করার পরও তারা সরে আসে না।”

“এজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। না হলে মানসিকতার পরিবর্তন হবে না। এ বিষয়ে কোনো আপোষ চলবে না।”

এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংসদ আফসারুল আমীন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এফ কবির আহমদ মানিক মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনার কাজ হবে চট্টগ্রাম শহরের দুর্ভোগ কবলিত নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে উদ্ধার করা।

“করপোরেশনের বাজেটে যে বরাদ্দ পাবে তা দিয়েই এ উদ্যোগ নেন। মেয়র হওয়ার পরও আপনাকে একথা বলা হয়েছিল।”

লালখান বাজার এলাকা থেকে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যান ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ফইল্যাতলি বাজার এলাকা পরিদর্শনে।

মঙ্গলবার সকালে এক মিনিটের ঝড়ে ফইল্যাতলি, কলেজ রোড, উত্তর সরাইপাড়া লোহার পুল, সগির চৌধুরী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধসে পড়া দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসেবে, নগরীর কমপক্ষে ৩০টি পাহাড়ে ৬৬৬টি পরিবার বেশি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এদের মধ্যে মতিঝর্ণা এলাকায় বসবাসকারী লোকজনই বেশি।

২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ও ভূমিধসে মারা যায় ১২৭ জন। লালখান বাজারের মতিঝর্ণাতেই ঘরের ওপর পাহাড় ধসে বেশকয়েকজন নিহত হয়েছিল।   

২০১২ সালের ২৬ জুন রাতে আকবর শাহ এলাকার ইয়াসিন কলোনির কবরস্থানের পাহাড় ধসে ঘর চাপা পড়ে নিহত হয় আটজন। একইদিন নগরীর উত্তর পাহাড়তলীর বিশ্বকলোনি, মক্কীঘোনা ও বাঁশখালীতে তিনজনসহ আরো ১৫ জন নিহত হন।

এর আগে ২০১১ সালের ১ জুলাই নগরীর টাইগারপাস এলাকার বাটালি হিলের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট নগরীর লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা গিয়েছিলেন চার পরিবারের ১১ জন।