মহেশখালের বাঁধ অপসারণে খুশি এলাকাবাসী দায়ীদের বিচার চায়

জনমত উপেক্ষা করে তৈরি বাঁধের কারণে বারবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে চরম ভোগান্তির পর তা অপসারণের কাজ শুরু হওয়ায় আনন্দিত চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর ও বন্দর এলাকার মানুষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 03:45 PM
Updated : 13 June 2017, 03:53 PM

তবে শুধু এতেই খুশি নন মহেশখালের বাঁধ অপসারণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এবং দুর্ভোগের শিকার বাসিন্দারা।

সরকারি কোটি কোটি টাকা খরচ করে অপরিকল্পিত এই বাঁধ নির্মাণ করে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি এবং পরিবেশের ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ দায়ে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন তারা। 

‘জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ হয়েই মহেশখালের ওপর দেওয়া বাঁধটি অপসারণের কথা জানিয়েছেনমেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

নগরীর বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের অন্যতম পথ মহেশখালে বন্দর রিপাবলিক ক্লাবের পাশে ২০১৫ সালের অক্টোবরে নগর পরিকল্পনাবিদদের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই বাঁধটি নির্মাণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই এর উজানের ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের বাসিন্দারা এর বিরোধিতা করে আসছেন।

সর্বশেষ গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত আনার পরের তিন দিন এবং সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে ছিল আগ্রাবাদ-হালিশহর ও বন্দর আবাসিক এলাকার বড় একটি অংশ।

নগরবাসীর চরম বিরোধিতা ও ক্ষোভ, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের ঢেউ উঠার পর মঙ্গলবার দুপুরের পর বাঁধটি অপসারণের কাজ শুরু হয়।

খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই বছর ধরে যে মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করল, পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো- এর দায় কে নেবে?

“যেহেতু বন্দর এই বাঁধ নির্মাণ করেছে, তাই তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।কোটি কোটি টাকা যে খরচ হল, সেটা দেশের মানুষের।এর বিচার করাও জরুরি।”

মহেশখালের মুখে একটি স্লুইস গেট স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এমনভাবে তা করতে হবে, যাতে জোয়ার-ভাটার পানি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু হলে তা দেখতে আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা সেখানে জড়ো হন। বাঁধের পাশের সেতু, ভবন ও সড়কে জমে থাকা পানিতে দাঁড়িয়েবাঁধ ভাঙ্গার প্রতিটি ধাপে সমর্থন জানিয়ে উল্লাসধ্বনি দিচ্ছিল তারা।

তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র নাছির বলেন, “জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সংসদ সদস্য আফসারুল আমীন ও এম এ লতিফের সাথে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

মঙ্গলবার বিকালে যখন মহেশখালের বাঁধ ভাঙ্গা হচ্ছে তখন আগ্রাবাদ ব্যাপারি পাড়ার বাড়ির নিচতলায় পানি জমে থাকায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছেন তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “নিচতলায় এখনো কোমর সমান পানি।বাঁধ ভাঙ্গছে শুনেছি।এবার যদি আমাদের মুক্তি মেলে।”

বাঁধের পাশে জড়ো হওয়াদের একজন নিমতলার বাসিন্দা শরিফুল বলেন, “এখানে কখনোই পানি উঠতো না।বাঁধের কারণে পানি কোনো দিকে যেতে না পেরে আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে।বাঁধটা ভেঙ্গে ফেলায় আমরা খুশি।কিন্তু এতদিন যে কষ্ট করলাম তার দায় কার?”

বাঁধটি নির্মাণের উদ্যোক্তাদের বিচার দাবিও করেন তিনি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরও বাঁধ অপসারণের কাজ চলছিল।

সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।রাতেও অপসারণের কাজ চলবে।

আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পুরো বাঁধটি অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি।

শুধু বাঁধে জলাবদ্ধতা নয়

শুধু এই বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন না মেয়র নাছির।

“জলাবদ্ধতা বাঁধের আগেও ছিল।এখনও আছে।আজকে আমরা তা অপসারণ করব।হয়ত এমনও হতে পারেকিছুদিন পর বলা হবে যে- কেন বাঁধটা  ভাঙ্গা হলো?

“বাঁধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত (বাসিন্দারা) হয়েছে, পুরোপুরিভাবে এটা বলা সঠিক হবে না।গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।গত ৮-১০ বছরে আর কখনো এত বৃষ্টি হয়নি।এখন আসলে অতিবর্ষণ হচ্ছে।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনুরোধে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই অস্থায়ী বাঁধনির্মাণ করে বলেও জানান নাসির।

বাঁধ অপসারণের পর বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে সেখানে একটি স্থায়ী স্লুইস গেট ও পাম্প হাউস নির্মাণ করার কথাও জানান তিনি।