হাঁটুপানিতে চট্টগ্রামের মেয়র

দুই বছর আগে জলাবদ্ধতামুক্ত ‘স্বপ্নের নগর’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন; নগরবাসীর দুর্ভোগ দেখতে গিয়ে তিনি নেমেছেন হাঁটুপানিতে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 10:18 AM
Updated : 12 June 2017, 10:20 AM

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগ্রাবাদ এক্সেক সড়কের ব্যাপারি পাড়া অংশ পরিদর্শনে গিয়ে জমে থাকা পানিতে নামেন সিটি মেয়র নাছির।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও নাজমুল হক ডিউক।

মেয়র সেখানে পরিদর্শনে যাওয়ার আগে থেকে জলাবদ্ধতার শিকার স্থানীয়রা মহেশখালের বাঁধ, সড়কের দুই পাশে নালা না থাকা এবং খাল-নালা পরিস্কার না করাই জলাবদ্ধতার কারণ বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।

ব্যাপারি পাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, এত বার টেলিভিশনে দেখিয়ে, পত্রিকায় লিখেও কোনো কাজ হয়নি। কেউ এসবে নজর দেয় না।

স্থানীয় কাঁচা বাজারে পানি উঠে যাওয়ায় বেচাকেনা ছিল বন্ধ।

ওই বাজারের এক বিক্রেতা মেয়র আসবে জানতে পেরে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “মেয়রকে আসতে বলেন; দেখে যাক নগরীর কী অবস্থা।”

জলাবদ্ধ সড়কের ওপর দিয়ে চলাচলকারী নৌকা দেখে পানি ডিঙিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের কেউ কেউ নানারকম কৌতুকও করছিল।

পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র নাছির জলাবদ্ধ আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ধরে কিছুটা হেঁটে এলাকার পরিস্থিতি দেখেন।

তখন সাংবাদিকদের মেয়র নাছির বলেন, “জলাবদ্ধতা সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। অনেক পুরনো সমস্যা। বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। এক বছরের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব, তা নয়। 

“সিটি করপোরেশনের সরঞ্জাম স্বল্পতা আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কোনো আলাদা আর্থিক বরাদ্দ আমরা পাই না।”

এবারের নিম্নচাপের প্রভাবে ছাড়াও চলতি মৌসুমেই ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে বৃষ্টিপাতসহ বেশ কয়েকবার তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এ জলাবদ্ধতার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি এবং মেয়র সবাই মহেশখালের অস্থায়ী স্লুইস গেটকে দায়ী করছেন।

মহেশখালের বন্দর রিপাবলিক ক্লাব সংলগ্ন অংশে ২০১৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদদের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাঁধটি নির্মাণ করে।

মোরার প্রভাবে ৩০ মে রাতে ভারি বর্ষণের পর ৩১ মে ডুবে যায় নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, গোসাইলডাঙ্গা, আগ্রবাদ এক্সেস সড়ক, পোর্ট কানেকটিং সড়ক, হাজি পাড়া, বেপারিপাড়া, শান্তিবাগ এবং হালিশহর আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়ক।

এরপর মহেশখালের স্লুইস গেট খুলে দিলেও ১ জুন পর্যন্ত নগরীর সিডিএ আবাসিক এলাকা এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ও আশেপাশের এলাকা থেকে পানি নামেনি।

১ জুন নগর ভবনে এক সভায় মহেশখালের বাঁধ অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু বাঁধটি অপসারণের আগেই ফের পানিতে ডুবল আগ্রাবাদ এলাকা।

এবার জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে গিয়ে মহেশখালের বাঁধ অপসারণের বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, “বাঁধটি জনস্বার্থেই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে এখানে আসার আগে ফোনে কথা হয়েছে। বন্দরের বোর্ড সভায় তারা বাঁধ অপসারণের বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।”

নাছির বলেন, “কিন্তু এটি করতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। মন্ত্রীর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। তিনি মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। লিখিত দিতে যেটুকু সময় লাগে। তারপর কাজ শুরু হবে।

“মহেশখাল অনেক বড়। ১০-১২টা ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে গেছে। অবস্থা খুব একটা ভালো না। গতকাল পুরো মহেশখাল ঘুরে দেখেছি। আশেপাশের লোকজনকে অনুরোধ করেছি ময়ল আর্বজনা যেন না ফেলে। দখল যেন না করে।”

আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা (নালা) না থাকার বিষয়টি জানিয়ে মেয়র বলেন, জাইকার অর্থায়নে সড়ক প্রশস্তকরণসহ নালা নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

“আগামী বর্ষার আগেই এসব কাজ শেষ করব। আশা করি আগামী বছর এ এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন।”