ঝড়ের রাতের পর ঘরে ফেরা

ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে টানা ঝড়োহাওয়া এবং বৃষ্টি কমে আসায় কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।

মিন্টু চৌধুরী কক্সবাজার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 11:04 AM
Updated : 30 May 2017, 11:04 AM

মঙ্গলবার ভোরে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে। সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে টানা ঝড়োহাওয়া আর বৃষ্টি। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির প্রকোপ কমে আসলে কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন ঘরে ফিরতে শুরু করে।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে গবাদি পশু নিয়ে বাড়ি ফেরার ছবিটি কক্সবাজারের সমিতি পাড়া থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব সতর্কতা হিসেবে জেলা প্রশাসন পৌরসদরসহ বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে সোমবার রাত থেকেই মানুষদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। মঙ্গলবার ভোরেও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসে।

কক্সবাজার শহরে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন হোটেলেও উপকূলীয় এলাকা থেকে আসা লোকজন তাদের পরিবার নিয়ে ওঠে।

কক্সবাজার পৌর সদরের সমুদ্র লাগোয়া এক নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরার টেক, কুতুববাজার, সমিতি পাড়া, বাসিন্দা পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়ায় কমপক্ষে দুই হাজার পরিবারের বাস।

পাশাপাশি অবস্থিত এসব পাড়া সমুদ্র লাগোয়া। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের এলেই এসব এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই পরিবার সদস্যদের নিয়ে সদর এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ওঠেন।

ঘূর্ণিঝড় 'মোরা’র প্রভাব কমার পর নৌকায় বাড়ি ফিরছে মানুষ। ছবিটি মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমার পর সকাল ১০টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তারা ঘরে ফিরতে শুরু করেন।

পায়ে হেঁটে, টমটম অথবা অটোরিকশায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ঘর ফিরতি মানুষের বেশিরভাগই নারী-শিশু। তাদের সঙ্গে ব্যাগ, বস্তায় নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া ছিল গবাদিপশুও।

সমিতি পাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক মোহাম্মদ আলম জানান, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে আগের দিন রাতেই আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সকালে ঝড় কমে যাওয়ায় এখন পরিবার নিয়ে ঘরে ফিরে এসেছেন।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে গবাদি পশু নিয়ে বাড়ি ফেরার ছবিটি কক্সবাজারের সমিতি পাড়া থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

তিনি বলেন, সমিতি পাড়ার অধিকাংশ পুরুষই সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে ঝড়ের সময় ঘরেই ছিল। কিন্তু স্ত্রী-সন্তান ও বয়স্কদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।

এলাকার আরেক বাসিন্দা হুমায়রা বেগম তার তিন সন্তান নিয়ে রাতে পৌর সদরের পাবলিক লাইব্রেরিতে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তিনিও ফিরেছেন ঘরে।

“ঝড় চলে গেছে, তাই চলে এসেছি,” বলেন হুমায়রা।

কুতুব পাড়ার বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্রী ইফাত ফারজানা মুন্নী তার মা ও তিন ভাইবোনের সঙ্গে লালদীঘি পাড়ের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। তবে তার বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাজির হোসেন ঘর ছেড়ে যাননি।

মুন্নী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড় চলে গেছে তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”

ঘূর্ণিঝড় 'মোরা’র প্রভাব কমার পর নৌকায় বাড়ি ফিরছে মানুষ। ছবিটি মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে অনেক পরিবারের ঘরের চাল উড়ে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে। ফিরে গিয়ে এসব সংস্কার করতে হবে। সেকারণে বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন।

সমিতি পাড়ার বৃদ্ধ জমির উদ্দিনের বাড়ি একেবারে সমুদ্র লাগোয়া। ঝড়ো হাওয়ায় তার টিনের একচালা ঘর ভঙ্গে গেছে। তবে রাতে পরিবারের অন্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকায় সবাই রক্ষা পেয়েছে। সকালে বাড়িতে ফিরে এসে মেরামতে লেগে পড়েছেন তিনি।

কাটেনি শংকা

লোকজন ঘরে ফিরতে শুরু করলেও থেমে থেমে বৃষ্টি ও বিপদ সংকেত না কমায় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা কাটেনি উপকূলবাসীর।

পৌর সদরে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সবজি ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ তার তিন শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সমিতি পাড়া এলাকার বাড়িতে ফিরলেও সমুদ্রের গর্জন ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি তাকে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত করতে পারেনি।

ঝড় উপকূল অতিক্রমের পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। ছবিটি মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

তিনি বলেন, “এখনো সংকেত নামেনি শুনেছি। যদি না কমে তাহলে হয়তো আবারও রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে। কি করব বুঝতে পারছি না।”

কুতুব বাজার এলাকার আরেক বাসিন্দাও একই শংকার কথা জানিয়ে বলেন, ঘরে লোকজন ফিরছে কিন্তু পরে কি হবে কিছু বুঝতে পারছেন না।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এনডিসি তাহমিলুর রহমান মুক্ত জানান, আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ার নির্দেশনা না থাকলেও কিছু মানুষ সকাল থেকে ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার জেলায় বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও জানান তিনি। পুরো জেলায় ২০ হাজারের মতো বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে গবাদি পশু নিয়ে বাড়ি ফেরার ছবিটি কক্সবাজারের সমিতি পাড়া থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

চকরিয়ায় গাছ চাপা পড়ে দুইজন মারা গেছেন বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

এছাড়া চকরিয়া ১০ হাজারের বেশি কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

মহেশখালী উপজেলায় পাঁচ হাজারের মতো কাঁচা ঘর ভেঙ্গে গেছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন ঘরে ফিরছে।”