এক সড়কে দু’প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ চরমে

ওয়াসার দুই প্রকল্পের পাইপ লাইন বসাতে বহদ্দারহাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলেমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলায় চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির চার উপজেলার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোমোস্তফা ইউসুফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2017, 12:40 PM
Updated : 28 May 2017, 12:40 PM

কেটে ফেলা সড়কের মদুনাঘাট, নজুমিয়া হাট, ভরাপুকুর পাড়, কুয়াইশ কলেজের সামনে, গোলাইপ্পার দোকান ও রাস্তার মাথা এলাকায় প্রতিদিনই যানজটে পড়তে হচ্ছে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের যাত্রীদের।

এর মধ্যে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে রাস্তার পুরোটাই কেটে ফেলা হয়েছে। এ পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে লাগছে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।

বহদ্দারহাট থেকে রাস্তার মাথা পর্যন্ত অংশে সড়কের নগরমুখী অংশ কেটে চলছে পাইপ বসানোর কাজ।

২০১৫ সালের ডিসেম্বর মদুনাঘাট পানি শোধানাগার প্রকল্পের পাইপ লাইন বসাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত সড়কের মাঝ বরাবর রাস্তা খুঁড়তে শুরু করে ওয়াসা।

এই প্রকল্পের অধীনে পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হতে চলেছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছরের অক্টোবরে।

ওই কাজ চলার মধ্যেই ২০১৬ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (ফেইজ-১) আওতায় পাইপ লাইন বসাতে একই সড়কের মদুনাঘাট থেকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ামুখী অংশ কাটা হয়।

সবশেষে চলতি বছরের শুরুতে ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের (ফেইজ-২) অধীনে মদুনাঘাট থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত নগরমুখী অংশও কাটা হয়।

ফলে সেখানে সড়কে আর কোনো আস্তরণ অবশিষ্ট নেই। মাঝে মাঝে শুধু কিছু ইট আছে। সড়কের পুরো অংশ জুড়ে উড়ছে বালি।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত অংশে সড়কে বড় বড় অনেক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আবার সড়কের মাঝখানে কোথাও কোথাও গর্ত খুড়ে দিনের বেলাতেই চলছে ওয়াসার কাজ।

এই সড়ক ধরে চলাচল করে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা, উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, রাউজান উপজেলার দক্ষিণ অংশ ও হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ অংশের ছয়টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ।

এই পথের নিয়মিত যাত্রী রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়াসার কাজ শুরুর আগে শহর থেকে ৪০ মিনিটে আসা-যাওয়া করা যেত। এখন সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার বেশি। রোগীরা খুবই সমস্যা পড়েন প্রতিনিয়ত। কিন্তু ওয়াসার কোনো বিকার নেই।”

শেখ ফরিদ বলেন, ওয়াসার রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করার কথা। অথচ তারা কাজ শুরু করে সকাল ১০টা থেকে।

“রমজানে অন্তত রাতে কাজ করলে মানুষ কিছুটা হলেও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে,” বলেন এই জনপ্রতিনিধি।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের মদুনাঘাট, ভরাপুকুর পাড়, নজুমিয়া হাট, কুয়াইশ কলেজের সামনের অংশ, রাস্তার মাথা, ওসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরির সামনের অংশের সড়কে পাইপ বসানোর কাজ চলছে।

পাইপ বসানোর ফলে সরু হয়ে যাওয়া সড়কের অন্য পাশ দিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।

কাপ্তাই বাস-মিনিবাস ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রকল্পের কাজের কারণে কিছু দূর পরপরই যানজটে পড়তে হয়।

“আগে একটি বাস তিন ট্রিপ দিতে (তিন বার আসা-যাওয়া) পারত। এখন মাত্র একটি ট্রিপ হয়। এছাড়াও সড়কের খোঁড়াখুড়িতে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, ধূলাবালিতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।”

মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মদুনাঘাট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কে পাইপ বসাচ্ছি।

“এ বছরের অক্টোবরে পাইপ বসনোর কাজ শেষ হবে। সড়কের যে অংশে কাজ চলছে সে অংশের বিপরীতে মাটি ভরাট করে সড়ক সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটা টেকসই হচ্ছে না।”

আরিফুল ইসলাম বলেন, “একমাত্র উপায় হচ্ছে দ্রুত কাজ শেষ করা। আমরা সেটাই করছি।”

২০১৭ সালের মার্চে কর্ণফুলি পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ-ওয়ানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার অর্থায়নে মোট এক হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

২০১৬ সালের দিকে কাজ শুর হয় কর্ণফুলি সরবরাহ প্রকল্পের ফেইজ-টু’র। এটির প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত।

অন্যদিকে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ৯ কোটি লিটার। ২০১৭ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।