শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সমাবেশে নারীনেত্রী নুরজাহান খান বলেন, হেফাজতে ইসলাম ভাস্কর্যকে ভয় পায় কেন? তারা কেন শিল্প-সংস্কৃতিকে ভয় পায়?
“সরকার হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে যে ভাস্কর্য সরালো- এটা এক আত্মঘাতী খেলা।”
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “মনে করবেন না আমরা প্রতিবাদকারীরা সংখ্যায় কম। ৫২, ৬৯, ৭১ এ আমরা জয়ী হয়েছি। এবারও হব। আমাদের দুর্বল মনে করলে ভুল করবেন।”
সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “ভাস্কর্য সরিয়ে ভোট বাড়বে এটাই যদি চিন্তা হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধু কন্যা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেননি। বাংলাদেশ ও বাঙালির পক্ষে এরা কখনোই ছিল না।
“প্রগতি, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে মৌলবাদ শক্তি সবসময় একমত ছিল। নারী, আধুনিক শিক্ষা আর বিজ্ঞানের প্রতি তাদের মনেভাব আমরা জানি। পাঠ্য বইয়ের সূচি পরিবর্তন করেছে। তারা ভাস্কর্য অপসারণ করিয়েছে, যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার শক্তিশালী ভাবে ক্ষমতায় আছে।”
আবুল মোমেন বলেন, হেফাজত ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চায়। তারা এটাকে প্রাথমিক বিজয় বলছে। নিজেদের অবস্থান সংহত করে তারা দাবি তুলেছে, দেশের যত ভাস্কর্য আছে সব অপসারণ করতে হবে।
“আশা করব, থেমিসের ভাস্কর্য আবার স্থাপন করা হবে। প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে এটা স্থাপন করা হয়েছিল। তিনিই এটা পুনঃস্থাপনের দায়িত্ব নেবেন।”
আবুল মোমেন বলেন, হেফাজত নির্বাচনী রাজনীতির সুযোগে দাবি আদায় করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায়।বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উচিত এ সংগ্রামে শরিক হওয়া।
“কেবল পদ্মা সেতু আর ফ্লাইওভার নির্মাণ করে কাঠামোগত উন্নয়ন হয়, সামগ্রিক উন্নয়ন হয় না। কোনটি বাংলাদেশের মূলধারা সেটি সরকারকে বুঝতে হবে।”
হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসের আদলে গড়া ভাস্কর্যটি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সরানো হয়।
রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’ এর আদলে এই ভাস্কর্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে।
ভাস্কর্যটি সরানোর পক্ষে এর নান্দনিক ‘ত্রুটির’ পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহের কাছে অবস্থানের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে তার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাকারীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করছে সরকার এবং এতে ধর্মীয় মৌলবাদ আরও উৎসাহিত হবে।
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল যখন ক্ষমতায় তখনই এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এ আঁতাত করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। ভবিষ্যতে চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে হবে।
“দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত- একটি অসম্প্রদায়িক ও অন্যটি সাম্প্রদায়িক ধারা। সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় স্থায়ী করা যাবে না।”
সমাবেশ থেকে ঢাকয় ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদের সময় গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতা ডা. চন্দন দাশ, অধ্যাপক অসীম দাশ, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, সংস্কৃতিকর্মী বিশ্বজিৎ পাল ও রাশেদ হাসান, শিল্পী দীপেন চৌধুরী, উদীচী চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতিম নন্দী।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।