শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের বিদ্যুৎ ভবনে ‘প্রি-পেইড’ মিটার চালু ও ভেন্ডিং মেশিনের উদ্বোধন শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি কিন্তু সাংঘাতিক জিনিস! আগামী মাসে আমি আবার আসব। আগে আমার লোক দিয়ে ছবি তুলিয়ে নেব, যাতে প্রি-প্ল্যানড করে পরিপাটি থাকলেও আপনাদের ত্রুটি ধরা যায়।”
চট্টগ্রামে মোট সাত লাখ গ্রাহকের মধ্যে গত তিন বছরে মাত্র এক লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার ধীর গতির সমালোচনা করেন নসরুল হামিদ।
আগামী বছরের মার্চের মধ্যে বাকি ছয় লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেন তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নিতে দেশের বাইরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হলে তারা সেটার অপব্যবহার করেন বলে তিরস্কার করেন প্রতিমন্ত্রী।
“বর্তমানে বিশ্বের অনেক স্থানে আধুনিক পদ্ধতিতে সাব-স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। এতে ৬০ শতাংশ জায়গা কম লাগে। এসব জ্ঞান আহরণের জন্য আপনাদের দেশের বাইরে পাঠাই, কিন্তু আপনারা তা না করে- শপিং করে চলে আসেন।
“আপনারা আন্তর্জাতিক জার্নাল পড়েন না। ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন না।”
দীর্ঘদিন ধরে বলে আসার পরও চট্টগ্রামের সাব-স্টেশন, ক্যাবল ও ট্রান্সফরমার ভূগর্ভস্থ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নসরুল হামিদ।
সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আগামী মাসে এ কাজে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেবেন। তিন মাসের মধ্যে ডিজাইন জমা দেবেন। না হলে আমি এখানকার চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে দেখে নেব।”
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বিবেচনায় রিভার ক্রসিং ক্যাবলগুলোকে সাবমেরিন করার নির্দেশ দিয়ে এ জন্য ডিপিপি পাঠাতে নির্দেশ দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, কিন্তু আমরা চলছি সনাতন পথে।”
সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ কমলেও চট্টগ্রামে তা না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
“চট্টগ্রামের পাঁচ শতাংশ বিদ্যুৎ যায় কোথায়? আপনারা কি সিস্টেম লস কমাতে চান না? আপনাদের অনীহার কারণ কী? মানুষ বুঝবে এ পাঁচ শতাংশ এখানে দুর্নীতি হয়।”
চট্টগ্রামে সাব-স্টেশনগুলোতে (বিদ্যুৎ) প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।
“বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে আসার সময় কিছু সাব-স্টেশন দেখলাম, খুবই করুণ অবস্থা। গেইটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নাই।
“ভবনের রং বিবর্ণ। ভালো ছাত্ররাই তো প্রকৌশলী হয়, আর চাকরি নেওয়ার পর আপনাদের এ অবস্থা!”
বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোতে ইচ্ছেমত লোকজন ঢোকে অভিযোগ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কোনো ড্রেস কোড মানেন না আপনারা। কে বাইরের লোক আর কে ভেতরের লোক, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
“এমনকি লুঙ্গি পরেও কয়েকজনকে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। এসব ক্যামেরার সামনে বলছি, যাতে আপনাদের লজ্জা হয়।”
বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের দুর্বলতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে নসরুল হামিদ বলেন, “উন্নত দেশ হওয়ার পথে এমন বিতরণ লাইন থাকতে পারবে না।
“পুরো পদ্ধতি ডিজিটাল হতে হবে। স্টার্টারে ক্রটি থাকলে সেটা মনিটরে দেখে একেবারে পিনপয়েন্টে বাড়ির লোকেশনসহ বলে দিতে হবে। এখন আমাদের লাইন খুঁজতে হয়। আপনাদের জানা থাকলেও বলেন না।”
প্রকৌশলীদের ফোন না ধরা ও পিয়নকে দিয়ে কথা বলানোসহ কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কাস্টমার সার্ভিস বলতে কিছু নেই এখানে।
সারা দেশের আড়াই কোটি গ্রাহকের মধ্যে কমপক্ষে দুই কোটি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। এসব মিটার পরিচালনায় প্রতি ৪০ হাজার গ্রাহকের জন্য প্রয়োজন হবে একটি করে ভেন্ডিং মেশিন (প্রি-পেইড মিটারের কার্ডের টাকা রিফিল করার যন্ত্র)। আর প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিন পরিচালনায় ১৪ জন করে জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
এই জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন প্রতিমন্ত্রী।
“তখন আমাদের কাছে সুপারিশ আসবে- ভাই এরে চাকরি দেন, ওরে দিয়েন না। আমি অমুক দল করি, ও করে না।
“ভেন্ডিং মেশিনে ১৪ জনের মধ্যে দেখা যাবে একজন গেছে টয়লেটে। তিনজনকে পাওয়া যাবে, চারজনকে পাওয়া যাবে না। যা হয় আর কি সরকারি অফিসে। প্রায়শ শুনবেন ভেন্ডিং মেশিন থেকে টাকা নিয়ে ভেগে গেছে। আরইবিতে এরকম ঘটনা ঘটেছে।”
অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কায়কাউস ও চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।