‘উপযুক্ত’ সময়ের অপেক্ষায় মনজুর

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরতে ‘উপযুক্ত’ সময়ের অপেক্ষায় আছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2017, 05:30 AM
Updated : 15 Dec 2017, 06:22 AM

চট্টগ্রামে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন মনজুর রাজনীতি ‘ছাড়ার’ ঘোষণা দিলেও এখন তার মনে হচ্ছে, রাজনীতি তাকে “নাও ছাড়তে পারে।”

গত দুই বছর সরাসরি রাজনীতিতে না থাকলেও নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থেকেই ‘সন্তুষ্ট’ বলে জানাচ্ছেন মনজুর।

গত বছর ১৫ অগাস্ট বঙ্গমাতা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান করার পর থেকেই মনজুরের আওয়ামী লীগে ফেরা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন মনজুরকে দলে ফেরাতে নিজের আগ্রহের কথাও জানিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

এরপর কিছুদিন এ নিয়ে আলোচনা ছিল না। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরুর পর আবারও মনজুরের নাম সামনে আসছে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মনজুর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সামাজিক কর্মকাণ্ডে আছি। রাজনীতিতে আমি এখন কোথাও নেই।”

দুই বছরে খাগড়াছড়িতে একটি স্কুল, সীতাকুণ্ডে একটি কলেজ, ছলিমপুরে একটি মসজিদ, উত্তর পাহাড়তলিতে একটি কবরস্থান এবং মোস্তফা-হাকিম কলেজের কাছে একটি মাদ্রাসা করার কথা জানান সাবেক এই মেয়র।

মনজুর বলেন, কাজ না করে তিনি বসে থাকতে পারেন না। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে ‘খুব আনন্দ’ হচ্ছে।

“চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে। পারিবারিক-সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়। আমি যাই, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনি।” 

‘দেশের প্রয়োজনে’ এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ‘চাইলে’ রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন মনজুর, যিনি মাঝখানে কিছুদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন।  

“প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমার মত মেয়র কত আসবে যাবে। উনি সবসময় আমাকে সহায়তা দিয়েছেন। আমার ভাতিজা (দিদারুল আলম) সে তো আমারই সন্তান- তাকে তিনি সীতাকুণ্ডের এমপি করেছেন। উনার নির্দেশ আমি অমান্য করতে পারব না।”

তাহলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শিগগিরই ফেরা হচ্ছে কি না- এই প্রশ্নে হাসতে হাসতে মনুজর বলেন, “সব কিছুর সময় আছে। যখন যা প্রয়োজন তখন তা হবে।”

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা বলেছেন মহিউদ্দিনের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা মনজুর।

“বঙ্গবন্ধু একজনই। তার এক আঙ্গুলের ইশারায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। পাহাড়তলিতে জাতির জনকের নামে একটি স্কুল করেছি। সেখানকার শিক্ষার্থীদের গোপালগঞ্জে পাঠিয়েছি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান আর মিশনারি স্কুল দেখাতে।

“১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মদিনে ‘বাংলার মহানায়ক’ নাটক এলাকায় মঞ্চস্থ করেছি, যাতে সবাই জানতে পারে তিনি কি ছিলেন।”

আসন্ন রোজার মাসে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে এবং সীতাকুণ্ডের কিছু এলাকায় ইফতার বিতরণের পরিকল্পনার কথাও বলেন মনজুর।

তার আওয়ামী লীগে ফেরা নিয়ে প্রশ্ন করলে দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, “উনি (মনজুর) তো বিএনপি করতেন বলে জানতাম। উনার সাথে আমার কখনও কথা হয়নি।

“কেউ আওয়ামী লীগ করতে চাইলে চট্টগ্রামে স্থানীয় ইউনিট আছে। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”

মনজুর আলমের বাবা আবদুল হাকিম কন্ট্রাকটর ছিলেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যও ছিলেন।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান মনজুর। পরে নির্বাচিত মেয়র হয়ে মহিউদ্দিনের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও করেন ।

এরপর ২০১০ সালের ১৭ জুন প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত মনজুর।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনজুর ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান; পেয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।      

মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন। আর ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত শোনা গেছে সব সময়।

তাদের দুজনের পারিবারিক সখ্যতার কথাও চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার জানা। মেয়র থাকাকালে মহিউদ্দিনের নামে নগরীর একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দেন মনজুর।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও মনজুর আলম ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় ‘কারচুপির’ অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি। গত বছর হওয়া নগর বিএনপির নতুন কমিটিতেও তার নাম আসেনি।