‘বড় ভাইদের’ দাবি মেটাতে ‘হিমশিম’ ছাত্রলীগ

শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারার জন্য ‘বড় ভাইদের’ দাবির সমন্বয় করতে না পারাকে কারণ দেখিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জেলার ছাত্রলীগ নেতারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 04:06 PM
Updated : 15 May 2017, 04:41 PM

স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মূল দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ‘দ্বন্দ্ব’ও এতে ভূমিকা রাখছে বলে তারা জানিয়েছেন।

রোববার চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা ও কর্মশালায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের উপস্থিতিতে তৃণমূল নেতারা একথা তোলেন।

ছাত্রলীগে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানের মধ্যেই এই চিত্র বেরিয়ে এল। 

প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন ১৬টি ইউনিটের মধ্যে ১২টি ইউনিটের প্রায় দেড় হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন। বাকি চারটি ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত থাকায় তাদের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি।

সভায় সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে কি না, না থাকলে কমিটি কখন পূর্ণাঙ্গ করা হবে এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়ন ও কলেজ শাখা কমিটিগুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে চান কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

এসময় কুমিল্লা উত্তর জেলা, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজ নিজ কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতে পারার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।

কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ এবং এর অধীন ইউনিটগুলোর কমিটি কতদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা হবে তা জানতে চান কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ।

জবাবে জেলাটির ছাত্রলীগের সভাপতি আবু কাওছার অনিক স্থানীয় সাংসদ এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা তুলে ধরে বলেন, এসব সমস্যা মিটিয়ে শিগগিরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনির্দিষ্ট সময় জানতে চাইলে অনিক মাইক্রোফোন তুলে দেন তার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের হাতে।

প্রতিনিধি সভা ও কর্মশালায় ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিনিধিরা

পরে জেলাটির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ ফকির বলেন, “আমাদের এলাকায় এমপিকেন্দ্রিক রাজনীতি হয়। তাকে সন্তুষ্ট রাখার বিষয় আছে।

“এছাড়া অন্য বড় ভাইয়ের লোকজনও আছে। এগুলো সব সমন্বয় করে আমাদের কমিটি করতে হয়। কমিটি দিতে আরও তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে।”    

এরপর রাঙ্গামাটি থেকে আসা সংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার জন্য সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যেকার দ্বন্দ্বকে দায়ী করেন।

এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিবাদের বিষয়টিও তুলে ধরেন তারা।

সব শোনার পর এক মাসের মধ্যে সেখানে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ।

খাগড়াছড়ি থেকে আসা নেতা-কর্মীরাও জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং এর অধীন ইউনিটগুলোর কমিটি না হওয়ার কারণ হিসেবে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন।

নগরীর এস এস খালেদ সড়কের একটি কনভেনশন সেন্টারে হওয়া কর্মী সভায় তৃণমূল ছাত্রলীগকে যে কোনো উপায়ে সংগঠিত করার কথা জানান কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

প্রতিনিধি সভা ও কর্মশালায় সাইফুর রহমান সোহাগ

সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রতিনিধি সভা ও কর্মশালার উদ্দেশ্য- তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করা।

“তৃণমূল পর্যায়ে আপনারা ছাত্রলীগের প্রাণ। আপনাদেরই ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে হবে।”

এস এম জাকির হোসাইন বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বকে যদি নেতৃত্ব দিতে চান তাহলে আপনাদের নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।

“আপনাদের মনের কথাটি জানার জন্য আমরা এসেছি। ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার জন্য যার যা কিছু প্রয়োজন তাই আপনারা দেবেন।”

সভা শুরুর আগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সভাস্থলের বাইরে জড়ো হয়। কিন্তু কমিটি স্থগিত থাকায় তারা সভায় অংশ নিতে পারেনি।  

ঢাকায় ছাত্রলীগের সমাবেশ শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে গাজীপুরের নিমতলি স্টেশন এলাকায় দক্ষিণ জেলার দুপক্ষের মারামারির পর বগি থেকে পড়ে মারা যান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ কর্মী তরিকুল ইসলাম (২০)।

পরদিন ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে এ বছরের ৪ মে চবি ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।