চট্টগ্রামে বিএনপির কর্মীসভায় হট্টগোল, চেয়ার ছোড়াছুড়ি

দুই পক্ষের হট্টগোল আর চেয়ার ছোড়াছুড়ির মধ্যে তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য না শুনেই শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কর্মীসভা। 

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2017, 01:32 PM
Updated : 2 May 2017, 01:42 PM

মঙ্গলবার বিকালে নগরীর নাসিমন ভবনের বিএনপি কার্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় এ ঘটনার পর বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর পরই সভা শেষ করে দেওয়া হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির এই কর্মীসভায় দুপুর থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মীরা জড়ো হতে থাকে নাসিমন ভবন এলাকায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগে এসে সভার মঞ্চ দখল করে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থক নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে।

বেলা ৩টার আগে আসলাম চৌধুরীর নাম ধরে স্লোগান দিতে দিতে সীতাকুণ্ড থানা বিএনপির ব্যানার নিয়ে একটি মিছিল সভাস্থলে প্রবেশ করে। এসময় তাদের নাম মঞ্চে ঘোষণা না করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্যেই আসলাম সমর্থকরা মঞ্চে অবস্থান নেয়া গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের দিকে চেয়ার ছুড়তে শুরু করলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় মঞ্চ ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে।

এক পর্যায়ে গিয়াস সমর্থকরা মঞ্চ থেকে নেমে গেলে সেখানে অবস্থান নেয় আসলাম সমর্থকরা।

বেলা সোয়া ৩টার দিকে খন্দকার মোশারফ হোসেন সভাস্থলে এসে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের নিয়ে মঞ্চে উঠেন। এসময় বারবার নেতারা স্লোগান বন্ধ করার অনুরোধ জানালেও গিয়াস ও আসলাম সমর্থকরা স্লোগান চালিয়ে যায়।

সভায় মাইক লাগানো হলেও বিশৃঙ্খলার সময় তার ছিঁড়ে যাওয়ায় তা আর ব্যবহার করা যায়নি। পরে খন্দকার মোশাররফ হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, “নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না করে নেতাকর্মীদের দায়িত্ব খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা।

“খালেদা জিয়া শিগগিরই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দেবেন। সে রূপরেখার স্বার্থে আন্দোলনের আহ্বান জানাবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে আপনারা যেন আন্দোলনে শরীক হতে পারেন।”

বক্তব্য শেষ করেই কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন মোশাররফ।

সংঘর্ষের ঘটনায় মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা গেছে।

সন্দ্বীপ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার উদ্দিন বলেন, “আমরা আশা নিয়ে এসেছি কর্মী সভায়। কোনো ‘ভাইয়ের’ নাম না শুনে নেতৃবৃন্দের দিক নির্দেশনা শুনতে চেয়েছিলাম।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে এ ধরনের সভা জরুরি। কিন্তু জ্যেষ্ঠ নেতাদের কোন্দলের কারণে কর্মীসভা করা সম্ভব হচ্ছে না।   

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “কর্মীসভায় তৃণমূলের নেতাদের অনেক কিছু বলার থাকে। কিন্তু ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার প্রেক্ষিতে নেতারাও তৃণমূলের কথা শুনতে পারেননি, কর্মীরাও নেতাদের কথা শুনতে পারেনি।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনর রশিদ, এসএম ফজলুল হক, মীর হেলালসহ উত্তর জেলার নেতারা।

উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি থাকাকালীন সময় থেকেই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরীর বিরোধ চরমে উঠে।

পরে ওই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি আসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও কাজী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল হাছানকে সদস্য সচিব করে উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়।

গত বছরের মে মাসে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন দল লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে’ আসলাম চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।