আগে নিজেরা সচেতন হোন, চট্টগ্রামবাসীর প্রতি পুলিশ কমিশনার

নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নগরবাসীকে সচেতন হতে বললেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2017, 02:39 PM
Updated : 30 April 2017, 02:39 PM

রোববার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে মাদকমুক্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর গড়ে তোলার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

সভায় নাগরিক প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেওয়া এক ব্যবসায়ী প্রতিটি বাড়ির মালিককে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে পুলিশের ভূমিকা নিশ্চিত করার আহ্বান জানালে জবাবে ইকবাল বাহার এ কথা বলেন।

তিনি বলেন,“সিসি ক্যামেরা লাগাতে বাড়ির মালিকে অনুরোধ করতে হবে কেন? আপনার আশেপাশে কে কি করছে সেটার উপর নজর রাখা আপনার দায়িত্ব। আপনার স্বার্থে সেটা আপনাকে করতে হবে।”

নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিজেকেই চিন্তা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,“আপনি কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন সেটা আপনাকে আগে ভাবতে হবে।  

“আপনি যদি মনে করেন আপনি দরজা খুলে ঘুমাবেন আর পুলিশ আপনাকে নিরাপত্তা দেবে তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। এ বিষয়ে আপনাদের দায়িত্ব আছে, সচেতন হবার প্রয়োজন আছে।”

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এছাড়াও সিএমপির অতিরিক্ত দুই পুলিশ কমিশনার, চার ডেপুটি কমিশনার ও নগরীর ১৬ থানার ওসিরা অংশ নেন।

এছাড়াও সিটি করপোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নাগরিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এ মতবিনিময় সভায়।

বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা নাগরিক প্রতিনিধিরা নিজেদের এলাকার মাদকের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকার চান।

ইকবাল বাহার জানান,গত তিন মাসে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের ১৬টি থানায় এক হাজার ৩৭৮টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে মাদক সংক্রান্ত মামলা এক হাজার ৫৮টি। আসামি ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৭১ জন।

“মামলা দিয়ে আসামি ধরে এটিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। এটি আমাদের সমাধানের দিকে নেবে না। দরকার সমন্বিত প্রয়াস।”

স্বল্পতম সময়ে পুলিশ মাদক নির্মূল করতে পারে মানুষের এ বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেন, “পুলিশ অনেক কিছু পারে, সবকিছু পারে না। সবকিছু পারাটা নির্ভর করছে আপনাদের উপরে।

“আপনার ট্যাক্সের পয়সায় আমি বেতন পাই, সুতরাং আপনি আমাকে বাধ্য করবেন আপনি যাতে ভালো থাকেন সে ব্যবস্থা যেন আমি নিই। এ জায়গাটাতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। শুদ্ধাচার কৌশলের অধীনে প্রতিটি অফিসে জনগণের প্রাপ্য সেবার চিত্র দেওয়া আছে। আপনি আপনার সেবা আদায় করে নিন।”

মাদকসেবীদের একটা তালিকা তৈরি করে ব্যবহারকারী ও সরবরাহকারীর মধ্যে একটা দেয়াল তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পুলিশ হাতে নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

নগরীর ১৪৫টি পুলিশ বিটে সমপরিমাণ অভিযোগ বাক্স বসানোর সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, একটি বিটে একজন এসআই, একজন এএসআই ও একজন কনস্টেবল থাকবে। জনগণ বিটে এসে তার এলাকার বিষয়টি বিট পুলিশকে জানাবে। অভিযোগ থাকলে সেটা বাক্সে দিয়ে যাবে।

“কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতির কারণে মাদকের বিস্তার ঘটে- এমন অভিযোগ তথ্যপ্রমাণসহ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব। এর আগেও আমি অসংখ্য পুলিশের চাকরি খেয়েছি অনৈতিক দায়িত্বে অবহেলার জন্য।”

রোজার মাসে যানজট সহনীয় করতে আগামী ২২ মে থেকে ২৭ মে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের বিষয়টি তিনি সভায় জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, “চাইলে এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম নগরকে মাদকমুক্ত করা যাবে না। প্রথমে আমাদের এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ”

ভালো পরিবারের সন্তান ও শিক্ষার্থীদের মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় শঙ্কা জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর যে রূপকল্প সেটা বাস্তবায়নের ভার পড়বে বর্তমান প্রজন্মের উপর। তাই মাদকের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।

“প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় নতুন মাদকাসক্ত তৈরি হচ্ছে। তাই মাদকের সহজলভ্যতা আমাদের বন্ধ করতে হবে, যাতে নতুন কোনো মাদকসেবী তৈরি না হয়।”

নগরীর ২৫টি ওয়ার্ডে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা পুলিশ কমিশনারে কাছে হস্তান্তর করেন মেয়র নাছির।

মাদকের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে নির্দিষ্ট সময় পর পর এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান মেয়র।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) দেবদাস ভট্টাচার্য ও অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মোহাম্মদ তানভির, সিসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হোসেন ও প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি।