রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে নিহত স্বপন কুমার বিশ্বাসের বড় ভাই অশোক বিশ্বাসের সাক্ষ্যে এ অভিযোগ আনা হয় বলে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন।
এছাড়াও মামলায় ওইদিন পুলিশের হামলায় আহত আবু সৈয়দ সাক্ষ্য দেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।
আগামী ২২ জুন আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ রেখেছে বলে জানান আইনজীবী মেজবাহ।
তিনি বলেন, আদালতে অশোক জানিয়েছেন তার ছোট ভাই স্বপন ঘটনার সময় উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন।
“স্বপন শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে সকালে নগরীর জামালখানের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন এবং পরদিন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।”
আইনজীবী মেজবাহ বলেন, “তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে পুলিশ ওই জনসভায় গুলি করেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন অশোক।”
এরশাদ সরকারের শেষ দিকে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যাওয়ার পথে তার গাড়িবহরে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
এরশাদের শাসনের অবসানের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা এ মামলা করেন।
অশোক আদালতকে আরও জানিয়েছেন, জনসভার দিন বেলা দুইটা-আড়াইটার দিকে তারা গুলির খবর পান। ওইদিন স্বজনদের বাসায় বাসায় খোঁজ নিয়ে স্বপনকে পাওয়া যায়নি।
পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্বপনের লাশ পাওয়া গেলেও পুলিশ তা পরিবারকে হস্তান্তর করেনি বলে অভিযোগ করেন অশোক।
ওইদিন (২৫ জানুয়ারি) বিকালে পুলিশ পাহারায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে নগরীর বলুয়ারদীঘি মহাশ্মশানে স্বপনের লাশ দাহ করা হয় বলে জানান তিনি।
জনসভায় অংশ নিতে যাওয়া কলেজ শিক্ষক আবু সৈয়দ আদালতকে জানান, জনসভায় যোগ দিতে অন্যদের সঙ্গে তিনিও নিউ মার্কেট এলাকায় আসেন। জিপিও ভবন পাড় হওয়ার সময় কোতোয়ালি মোড়ের দিক থেকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে।
ওই সময় তিনি জনসভার দিকে যেতে না পেরে ফিরে যাওয়ার সময় সিটি কলেজ এলাকায় পুলিশ তাকে বেধড়ক পেটায়। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পর পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
আহতাবস্থায় আবু সৈয়দ চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিলেও পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছেন জানিয়ে হাসপাতাল থেকে কোনো সনদ দেয়নি বলে অভিযোগ করেন আবু সৈয়দ।