সুইমিং কমপ্লেক্স অবশ্যই হবে: নাছির

ছাত্রলীগের বিরোধিতার মধ্যে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণে নিজের দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 02:56 PM
Updated : 19 April 2017, 02:56 PM

বুধবার বিকালে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে মেয়র গোল্ডকাপ আন্তঃ ওয়ার্ড ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

চট্টগ্রামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেএকএস) সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, “সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণে আমরা কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না। সুইমিং কমপ্লেক্স অবশ্যই হবে।”

মঙ্গলবার মহানগর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সুইমিং পুল নির্মাণ বন্ধ করতে প্রকল্প এলাকায় ভাংচুর ও পুলিশের সঙ্গে ওই সংঘর্ষে জড়ানোর পরদিন একথা বললেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামের ৭০ হাজার ৩৮০ বর্গফুট জায়গায় ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এই আউটার স্টেডিয়ামেই প্রতিবছর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়, যার অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

গত ১০ এপ্রিল লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে সুইমিং পুল করার উদ্যোগ বন্ধ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে আউটার স্টেডিয়াম টিন দিয়ে ঘিরে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিজেএকএস।

হোল্ডিং ট্যাক্স, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থানান্তরসহ কয়েকটি বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নাছিরের বিবাদ গত কিছুদিন ধরেই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল।

তার অবসান ঘটিয়ে সোমবার তারা এক মঞ্চে উঠে হাতে হাত রেখে ‘ঐক্যে’র ঘোষণা দেওয়ার পরদিন কাজীর দেউরিতে  সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণের বিরোধিতায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ।

এর আগে গত রোববার মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, সহ সভাপতি রুমেল বড়ুয়া রাহুলসহ কয়েকজন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। সেখানে সুইমিং পুলের কাজ বন্ধ করে সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

আলটিমেটামের শেষ দিন মঙ্গলবার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সুইমিং পুল নির্মাণ বন্ধ করতে প্রকল্প এলাকায় ভাংচুর করার পর পুলিশের সঙ্গে ওই সংঘর্ষ হয়। এর একদিন পর সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণে অনড় থাকার ঘোষণা দিলেন সিটি মেয়র নাছির।

সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ দীর্ঘদিনের চেষ্টার বাস্তব প্রতিফলন মন্তব্য করে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য বড় অর্জন। সুইমিং কমপ্লেক্স করার জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই চেষ্টা চলছে।

“অনেক আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিভাগীয় হেড কোয়াটার্সগুলোতে সুইমিং পুল স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন বিভাগীয় হেডকোয়াটার্সে নির্মাণ হলেও রহস্যজনকভাবে এখানে হয়নি।”

পরবর্তী সময়ে জেলা হেড কোয়াটার্সগুলোতে সুইমিং পুল হলেও বিভাগীয় হেডকোয়াটার্স হওয়া সর্ত্ত্বেও চট্টগ্রামে সুইমিং পুল হয়নি বলেও জানান নাছির।

সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় আমিও তাদের সাথে গিয়েছিলাম। এসময় বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম এবং উনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

“এর ধারাবাহিকতায় তিন-চার বছর ধরে চেষ্টা করে একনেকে অনুমোদন দিয়েছে এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এটা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে।”

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ করেছে জানিয়ে নাছির বলেন, “এটা নিয়ে কারো কারো বিভ্রান্তি আছে, ভুল ধারণা আছে, ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আমার মনে হয় এটা তারা না বুঝে করছেন বা উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে করছেন। ক্রীড়ার সাথে যারা জড়িত, তারা বোঝেন তাদের জন্য এটার কী প্রয়োজন।”

এসময় তিনি সুইমিং পুল নির্মাণের বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরেন।

মঙ্গলবারের ভাংচুর ও সংঘর্ষের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। তাদের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি। এ বিষয়ে তারা জিরো টলারেন্সে আছে।

“জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছেন বলে আমাকে বলেছেন। এবিষয়ে তারা যা যা করার করবে।”

ইতোমধ্যে সুইমিং পুল প্রকল্প এলাকায় ভাংচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আসামি করে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সুইমিং কমপ্লেক্সটি একনেকে অনুমোদিত জানিয়ে নাছির বলেন, “কেউ যদি এটাতে বাঁধা দিতে চায়, তাহলে ধরে নেওয়া হবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাঁধা দিতে চাচ্ছে। তাহলে তাকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে।”