আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল: চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ

চট্টগ্রামে আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে ছাত্রলীগের ভাংচুরের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে সরকারসমর্থক এই ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2017, 11:21 AM
Updated : 18 April 2017, 03:38 PM

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকালে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি।

পরে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে ছাত্রলীগকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করার কথাও জানান উপ-কমিশনার মোস্তাইন হোসেন।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলছেন, সংঘর্ষের সময় তার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অমিতাভ চৌধুরী বাবু, গোলাম সামদানী জনি ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য লিটন চৌধুরী রিংকু গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

“খেলার মাঠ সংরক্ষণের জন্য আমরা আগে থেকেই আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আজকের কর্মসূচিও পূর্বঘোষিত। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা করেছে।”

‘দোষী’ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান রনি।

অন্যদিকে উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসেন বলেন, “আগে অনুমতি না নিলেও তাদের তাৎক্ষণিক সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা সু্‌ইমিং পুল এলাকায় ঢুকে ভাংচুর শুরু করে।”

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক রনি এর নেতৃত্বে ছিলেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সংঘর্ষের সময় তাদের ১৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬০ রাউন্ড শটগানের গুলি এবং ছয় রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামের ৭০ হাজার ৩৮০ বর্গফুট জায়গায় ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুইমিং পুল নির্মাণ করা হচ্ছে চট্টগ্রামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেএকএস) তত্ত্বাবধানে, যার সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

অন্যদিকে এই আউটার স্টেডিয়ামেই প্রতিবছর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়, যার অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

হোল্ডিং ট্যাক্স, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থানান্তরসহ কয়েকটি বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নাছিরের বিবাদ গত কিছুদিন ধরেই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। 

তার অবসান ঘটিয়ে সোমবার তারা এক মঞ্চে উঠে হাতে হাত রেখে ‘ঐক্যে’র ঘোষণা দিলেও পরদিনই কাজীর দেউরির এ ঘটনা ঘটল।

গত ১০ এপ্রিল লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে সুইমিং পুল করার উদ্যোগ বন্ধ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে আউটার স্টেডিয়াম টিন দিয়ে ঘিরে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিজেএকএস।

এরপর মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, সহ সভাপতি রুমেল বড়ুয়া রাহুলসহ কয়েকজন গত রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। সেখানে সুইমিং পুলের কাজ বন্ধ করে সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দ মঙ্গলবার দুপুরের আগে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সুইমিং পুল নির্মাণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

অন্যদিকে ছাত্রলীগ কর্মীরা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে কাজীর দেউরি মোড়ের কাছে জড়ো হন। তার আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে ছিলেন। 

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রথমে মানববন্ধন ও পরে রাস্তা আটকে সমাবেশ শুরু করলে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সোয়া ৪টার দিকে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ সমাবেশে এসে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

বেলা সোয়া ৪টার দিকে ছাত্রলীগকর্মীরা একত্রিত হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আউটার স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে। সুইমিং পুল নির্মাণ এলাকার টিনের বেড়া ভেঙে তারা কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করে এবং এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়।

এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা আউটার স্টেডিয়ামের পাশে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ, দোকান ও যানবাহন ভাংচুর করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এক পর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে ছাত্রলীগকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ওই সড়কে আবার যান চলাচল শুরু হয়।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কাজীর দেউরি মোড় থেকে ফিরে যাওয়ার পথে সুইমিং পুলের বিরোধীতাকারী ছাত্রলীগ কর্মীরা লালখান বাজার ও ওয়াসা মোড়ে আ জ ম নাছিরের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায়।

ছাত্রলীগ নেতা রনির অভিযোগ, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নেতৃত্বে সেখানে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাইন বলেন, “ছাত্রলীগের দায়িত্ব কে নেবে আমরা জানি না। এটি সরকারি কাজ, কেউ ফোর্স করে কাজ নস্যাৎ করতে পারবে না।”

‘সংঘর্ষ ও হামলায়’ অংশগ্রহণকারীদের পাশাপাশি ‘ইন্ধনদাতাদের’ ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের নায়েক আব্দুল হান্নান জানান, আহতদের মধ্যে কোতোয়ালি থানার এসআই শহীদুল ইসলাম ও কনস্টেবল পিপলু বড়ুয়া এবং পাঁচ ছাত্রলীগকর্মী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর বাইরে আরও ১১ পুলিশ সদস্য হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে কোতোয়ালি থানার ওসি জসীম উদ্দিন, এসআই মহিবুর রহমান, সময় টিভির ক্যামেরা পারসন আশরাফুল আলম মামুন ছাত্রলীগকর্মীদের ছোড়া ঢিলে আঘাত পেয়েছেন।