জানাজা আর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গশ্চি গ্রামে মাতুব্বর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সিদ্দিক আহমেদকে দাফন করা হয়।
এর আগে সকাল সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক।
উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, বর্তমান সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।
জানাজা শেষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এরপর সিদ্দিক আহমেদের মরদেহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ‘সর্বস্তরের নাগরিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন’ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার গুণগ্রাহীরা।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, রাউজানের সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী, বাগবিশিস কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর, বিএফইউজে যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, নারীনেত্রী রেখা চৌধুরী, সাংবাদিক সমরেশ বৈদ্য, দিবাকর ঘোষ, রাশেদ মাহমুদ, আলোকময় তলাপাত্র, কামাল পারভেজ, আলমগীর সবুজ, সেলিম আক্তার পিয়াল, রমেন দাশগুপ্ত ও মিন্টু চৌধুরী।
শোক জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন, অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্তা, ড. কুন্তল বড়ুয়া, ডা. জিল্লুর রহমান, ডা. ভাগ্যধন বড়ুয়া, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য সচিব ডা. চন্দন দাশ ও সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, কবি আশীষ সেন, কবি মনিরুল মুনির, একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূর্ল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক শওকত বাঙালি, যুব ইউনিয়নের সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়া ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আতিক রিয়াদ।
এরপর তার মরদেহ রাউজানের গশ্চির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বিকালে গশ্চি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গশ্চি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরে শিক্ষক ছিলেন সিদ্দিক আহমেদ।
পরে বিকাল ৫টার দিকে গশ্চি গ্রামের মাতুব্বর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বুধবার ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক সিদ্দিক আহমেদ (৭১)।
চট্টগ্রামের নবীন-প্রবীণ সব সাংবাদিকের কাছে ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত সিদ্দিক আহমেদ সবার সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতেন বয়সের সীমা ডিঙ্গিয়ে।
সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও সৎ সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের শেষ ভরসাস্থল।
১৯৪৬ সালে চট্টগ্রামের রাউজানে জন্ম নেওয়া সিদ্দিক আহমেদ বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সক্রিয় কর্মী।
ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত সিদ্দিক আহমেদ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিক্ষকতা, কৃষিকাজ ও কৃষক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
এ পর্যন্ত সাতটি বই প্রকাশিত হয়েছে সিদ্দিক আহমদের। তার জীবন ও রচনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে দুটি স্মারক গ্রন্থ।