চট্টগ্রামে বাংলা বর্ষবরণ প্রস্তুতির মধ্যে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনের দেয়ালচিত্রে ‘পোড়া মবিল’ ছিটিয়ে নষ্ট করা হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চট্টেশ্বরী রোডে চারুকলা ইনস্টিটিউটের মূল গেইটের বিপরীত পাশের দেয়ালে আঁকার কাজ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর আধা ঘণ্টা পর দুটি মোটর সাইকেলে চার যুবক এসে দেয়ালচিত্রটি নষ্ট করে দিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে চকবাজার থানার ওসি নুরুল হুদা জানিয়েছেন।
বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘অনৈসলামিক’ দাবি করে ইসলামী বিভিন্ন সংগঠন তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু চট্টগ্রামের এই দেয়ালচিত্র কারা নষ্ট করেছে, তা জানা যায়নি।
মৌলবাদী শক্তিই এ ঘটনা ঘটিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে পছন্দ করে না। সৃষ্টি না করে তারা সবকিছুতেই ধ্বংসাত্মক চিন্তা করে।”
২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিলে ‘পানি ও বিদ্যুতের দাবিতে’ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ধর্মঘট ডেকেছিল ইসলামী ছাত্র শিবির।
ধর্মঘটে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার পাশাপাশি বৈশাখ উদযাপনের জন্য তৈরি করা টেপা পুতুলসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
২০০৬ সালে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্বে থাকা সালেহ উদ্দিন বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের দ্বন্দ্ব থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।”
বাংলা নববর্ষ অসাম্প্রদায়িক উৎসব উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৌলবাদীরা বাঙালি সংস্কৃতিকে তাদের শত্রু মনে করে। এর সাথে তারা ‘হিন্দুইজমকে’ মিলিয়ে ফেলে।
২০০৬ সালে চবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে হলেও এবার তা গোপনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন গাজী সালেহ উদ্দিন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী প্রদীপ ঘোষ তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- “রাতের অন্ধকারে এসে চট্টগ্রাম চারুকলার সামনের দেয়ালে করা দেয়ালচিত্রটি নষ্ট করে দিয়েছে মৌলবাদীরা। শিল্পাচার্য যে রুচির দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বলেছিলেন আমারা শিল্পীসমাজ তা ভুলে গেছি? যদি শিল্পীরা তাদের সব ডিজাইন বন্ধ করে দেয় তবে মানুষ দিগম্বর হয়ে যাবে। পথে আসুন, পথে নামুন....”
পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বিরোধীতা করেছে চিঠিও দিয়েছে কয়েকটি মৌলবাদী সংগঠন।
“যারা দেয়ালচিত্র মুছে দেওয়ার মতো কাজ করেছে তারা দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। নাগরিক হতে হলে ছবি তুলতে হয়, এমনকি হজে গেলেও ছবি তুলতে হয়।”
চবি চারুকলা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জিহান করিম বলেন, “এবারের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুঁচে যাক জরা... অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’। দেয়ালচিত্রটি দেখে এখন মনে হচ্ছে গ্লানি মুছতে তারা পোড়া মোবিল দিয়েছে, আর আগুন জ্বালিয়ে দিলে অগ্নিস্নান।