পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যামামলা নিয়ে আদালতে ছাত্রদল নেতা নুরুর স্ত্রী

চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার একটি অভিযোগ আদালতে জমা দিয়েছেন তার স্ত্রী সুমি আক্তার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2017, 12:04 PM
Updated : 12 April 2017, 12:36 PM

বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজের আদালতে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় এ অভিযোগ করা হয়।

সুমির আরজির পর আদালত নুরুর নিহত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামে কোনো থানায় অন্য কোনো মামলা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে ২০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।

গত ৩০ মার্চ রাউজান উপজেলার বাগোয়ান এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুর হাত ও মুখ বাঁধা লাশ পাওয়া যায়।

তার আগের দিন চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরার বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে নুরুকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে তার পরিবারের অভিযোগ। খুনের জন্যও পুলিশকেই দায়ী করেন তারা।

লাশ উদ্ধারের পর নুরুর পরিবার মামলা করতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল দাবি করে পুলিশ একটি মামলা করে। চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা তখন বলেছিলেন, পরিবার চাইলে আদালতে মামলার পথ খোলা রয়েছে।   

নুরুর স্ত্রীর মামলার আরজিতে রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ মো. জাবেদের (৩৮) নেতৃত্বে নুরুকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন বাবুল মেম্বার, খালেক মেম্বার, জসীম, সেকান্দর, নাসের ওরফে টাইগার নাসের, এমরান, হাসান, নুরুল ইসলাম, লিটন, মোর্শেদ, ভুপেশ বড়ুয়া ও মো. রব্বানী।

বাদী পক্ষের আইনজীবী তারিক আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “শুনানি শেষে বিচারক মাসুদ পারভেজ বলেছেন, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি ও এসপি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন। এই কাজে সব থানার ওসিরা সহযোগিতা করবেন।”  

ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর নুরুর স্ত্রীর অভিযোগটির বিষয়ে আদালত নির্দেশ দেবেন বলে জানান আইনজীবী তারিক।

এদিকে এসআই শেখ জাবেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “অভিযোগ যে কেউ করতেই পারেন। ঘটনার দিন নগরীতে আমি কোনো অভিযানে যাইনি। এটা সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা অভিযোগ।”

নুরুর লাশ উদ্ধারের পর তার পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদী পক্ষের আরেক আইনজীবী আবদুস সাত্তার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের পাওয়া না গেলে পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যু মামলা করতে পারে। কিন্তু নুরুর স্বজনরা লাশ উদ্ধারের আগে থেকেই উপস্থিত ছিল। অথচ পুলিশ কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করে একটি নিয়মিত মামলা করেছে।”

৩১ মার্চ এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাউজান থানায় যে হত্যা মামলা করে, তাতে নিহতের পরিবারের কোনো সম্মতি নেওয়া হয়নি বলে আদালতে করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ভিকটিমের পরিবারকে আমরা মামলা দিতে বলেছিলাম। তারা বলেছে আল্লাহকে বিচার জানিয়েছে, আল্লাহ বিচার করবে।”

ঘটনার ১৩ দিন পর অভিযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী আসফাক আহমেদ বলেন, নুরুর স্ত্রী শোকগ্রস্ত ছিলেন।

“এছাড়া আসামিরা সবাই প্রভাবশালী এবং স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে অভিযোগ করতে একটু সময় লেগেছে।”

পুলিশের বিরুদ্ধে নুরুর পরিবারের অভিযোগ থাকায় রাউজান থানার মামলাটি তদন্তে ‘অনাগ্রহের’ কথা জানিয়ে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানোর সুপারিশ জানিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

আইনজীবী তারিক আহমদ বলেন, “জেলা পুলিশের তদন্ত করতে না চাওয়াই অনেক কিছু প্রমাণ করে। আসামি যতই প্রভাবশালী হোক, আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।”

বুধবার আদালতে সুমি আক্তার এবং নুরুর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা কেউ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি।

বাদী পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে নুরুর পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে চান না।