চট্টগ্রামের জঙ্গি আস্তানা ও ঢাকায় জঙ্গিদের আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ‘একই রকম’ সুইসাইডাল ভেস্টের ব্যবহার, সীতাকুণ্ডে গ্রেপ্তার দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য, সেখানে জঙ্গিদের জড়ো হওয়াসহ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ থেকে এই ধারণার কথা বলছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে সাধারণত জঙ্গিরা একটি ঘটনার পর কিছুদিন অপেক্ষা করত। কিন্তু সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পরপরই ঢাকায় তাদের দুটি ঘটনা ঘটানো প্রমাণ করে তাদের একাধিক গ্রুপ সক্রিয় আছে।
বাড়িওয়ালার কাছে খবর পেয়ে বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভা নামার বাজার এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাশের প্রেমতলা ওয়ার্ডের বাড়িতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ।
গ্রেনেড হামলায় এক পরিদর্শক আহত হওয়ার পর বাড়িটি ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন ভোরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নেতৃত্বে অভিযানে এক শিশুসহ চার জঙ্গি নিহত হন, যাদের দুজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান।
পুলিশ কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সীতাকুণ্ডের নামার বাজারের ‘সাধন কুটির’ থেকে দুজন পালিয়ে গেছে।
“হৃদয় ও রাশেদ নামের দুজন ওই বাসা থেকে ল্যাপটপ নিয়ে চলে যায়। তাদের আমরা পাইনি।”
ওই বাড়ির মালিক সুভাষ চন্দ্র দাশের তথ্য মতে, তাদের একজনের বয়স ১৫ এবং অন্যজন ২৫-২৬ বছরের যুবক, যার মুখে একটু দাড়ি ছিল।
বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিদের ভাড়া নেওয়া ওই বাসায় প্রচুর পরিমাণ টাইম কার্ড, ইলেকট্রনিক আইসি ও সরঞ্জাম দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই সব সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করছিলেন ২৫-২৬ বছরের যুবকটি। তার কাছে একটি ল্যাপটপ ছিল।”
‘সাধন কুটির’ থেকে গ্রেপ্তার জহিরুল হক জসিম ও তার স্ত্রী আর্জিনা এবং প্রেমতলার বাড়িতে অভিযানের সময় নিহত জঙ্গি কামাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী জোবায়দা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
“উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই ঢাকা-চট্টগ্রামে জঙ্গিরা একযোগে হামলা করতে চেয়েছিল বলে আমাদের ধারণা।”
এদিকে শনিবারও সীতাকুণ্ডের প্রেমতলার ওই জঙ্গি আস্তানায় তল্লাশি চালায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল।
জঙ্গিদের ভাড়া নেওয়া ওই বাসার একটি কক্ষ থেকে ১৫টি শক্তিশালী বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ছয়টি ড্রাম উদ্ধার করা হয়।
প্রতিটি ৪০ লিটার ধারণ ক্ষমতার ছয়টি কন্টেইনারের মধ্যে পাঁচটিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং অন্যটিতে এসিড আছে।
“ওই বাসার আরও দুটি কক্ষ সিলগালা করা অবস্থায় আছে। এগুলো তল্লাশি চালিয়ে শেষ করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। অত্যন্ত সর্তকতার সাথে এই তল্লাশি চালাতে হচ্ছে। কারণ বোমাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী।”
এরআগে বৃহস্পতিবার অভিযান শেষে ওই বাসার একটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে ১০টি বোমা উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে চারটি ছিল সুইসাইডাল ভেস্ট।
ওই বাসার দেওয়ালে ‘দাউলাতুল ইসলাম’ লেখা রয়েছে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাদের তদন্তে এ বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।