সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

রাতভর ঘিরে রাখার পর সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2017, 00:54 AM
Updated : 16 March 2017, 05:18 AM

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাইরে থেকে গুলি চালায় পুলিশ, জবাবে একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।

ঘটনাস্থল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক মোস্তফা ইউসুফ জানান, এ সময় সাত থেকে আট মিনিট ধরে গুলির পাশাপাশি সাত-আটটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একের পর এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা।

কিছুক্ষণ পর পুলিশের ঘিরে রাখা কম্পাউন্ডের ভিতর থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স বেরিয়ে যেতে দেখা যায় বলে জানান তিনি।

সীতাকুণ্ড শহরের প্রেমতলা ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ার ‘ছায়ানীড়’ নামের একটি দোতলা বাড়িতে এই অভিযানে স্থানীয় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা রয়েছেন।

এই দলে রয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন, যিনি ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অংশ নেন।

ছানোয়ার জানান, তাদের দলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ছাড়াও সোয়াট, বোমা নিস্ক্রীয়কারী দলের সদস্য এবং পুলিশ সদরদপ্তরের ‘এলআইসি’ দলের সদস্যরা রয়েছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম ও বোমা নিস্ক্রীয়কারী দলের সদস্যরাও রয়েছেন।

বুধবার বিকালে সীতাকুণ্ড পৌর শহরে ‘জেএমবির জঙ্গিদের’ একটি আস্তানা থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ এক দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর নিকটবর্তী এলাকার ওই বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখেন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।

রাতভর কয়েক দফায় জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময় চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

ওই ভবনে জঙ্গিদের পাশাপাশি কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা আটকা পড়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে জঙ্গি কতোজন এবং আটকা পড়া সাধারণ মানুষের সংখ্যা কত তা স্পষ্ট করতে পারেননি কর্মকর্তারা।

এক বাড়িওয়ালার কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় দোতলা সাধন কুটির নামে একটি ভবনের নিচতলায় পুলিশের অভিযান শুরু হয়। সেখান থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ জসিম ও আর্জিনা নামের এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই দম্পতির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাশের প্রেমতলা ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ার ‘ছায়ানীড়’ নামের এই দোতলা বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক আহত হন। পরে সীতাকুণ্ডের ওসি ইফতেখার হাসানের নেতৃত্বে আরেকটি দল এসে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন র‌্যাব ও সোয়াট সদস্যরা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নামার বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল ইসলাম চৌধুরী মুরাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাধন কুটিরে অভিযানের পর পুলিশের একটি দলের সঙ্গে তিনিও প্রেমতলায় আসেন।

“পুলিশ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পরিদর্শক মোজাম্মেল। তিনি ছায়ানীড়ের গেইটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোতলা থেকে গ্রেনেড চার্জ করে। বিস্ফোরণে পায়ে আঘাত পেয়ে তিনি পড়ে যান।”

পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে থেকে ওই বাড়ি থেকে জঙ্গিরা মোট সাতটি গ্রেনেড ছোড়ে বলে কাউন্সিলর মুরাদ জানান।

“বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। মনে হচ্ছে বিস্ফোরকগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী,” বলেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক মোস্তফা ইউসুফ জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোয়াট সদস্যরা ওই বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেন এবং চারপাশে রেকি করা শুরু করেন।

পরে ওই বাড়ি ঘিরে তীব্র আলোর ব্যবস্থা করা হয়। একটি সাদা রঙের সাঁজোয়া যানও আনা হয় সেখানে। রাত ৯টার পর থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ পাওয়া যায় সেখান থেকে। ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষ টিম আসার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটও এখানে আসে।

ওই বাড়ি ঘেরাওয়ের পরপর পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাং শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “বাড়ির মালিক আমাদের বলেছেন, দোতলায় তিনজন আছে। তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে।”

চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে বেশ কিছুদিন পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও সম্প্রতি কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় দুই জঙ্গিকে আটক করার পর তাদের একজনকে নিয়ে ওই রাতেই মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল এবং ৪০টি বিস্ফোরক জেল।

এরপর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।