উন্নয়ন কাজে গাফিলতি হলে ছাড়ব না: প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামের বেহাল সড়ক দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করে উন্নয়ন কাজে কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোমোস্তফা ইউসুফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2017, 02:39 PM
Updated : 12 March 2017, 03:19 PM

তিনি বলেছেন, “কাজ মানসম্মত হতে হবে। কোনো গাফলতি হলে ছাড়ব না… আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি। কমিশন খেতে আসিনি।”

রোববার চট্টগ্রামে ওয়াসার একটি প্রকল্প উদ্বোধনের সময় এই হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। নৌবাহিনীর দুটি সাবমেরিন উদ্বোধনের পর নৌ ঘাঁটি থেকে বোট ক্লাবে গিয়ে নিজের নামে করা পানি শোধনাগার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

নৌঘাঁটি থেকে বেরিয়ে ১১ নম্বর রোড (এয়ারপোর্ট রোড) ধরে বোট ক্লাবে যাওয়ার পথে বেহাল সড়ক দেখে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বন্দর নগরীর বেহাল এই সড়কে দুটি খালের উপর সেতু ভেঙে রয়েছে। ওই রাস্তায় যান চলাচল করতে হচ্ছে সরু একটি বেইলি সেতু দিয়ে।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে নিজের সরকারের নানা কার্যক্রমের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তবে আজকে আমি নেভাল থেকে এখানে আসার পথে রাস্তাঘাটের যা অবস্থা দেখেছি, তাতে খুব দুঃখ পেয়েছি। আমি জানি না রাস্তার এ দুরবস্থা কেন? বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ব্রিজের কাজগুলোও সম্পন্ন করা হয়নি।”

২০১৫ সালেও এই রাস্তার একই অবস্থা দেখে তা সংস্কার করতে বলে গিয়েছিলেন বলে জানান সরকার প্রধান।

“তখন আমি আমার সামরিক সচিব আবেদিনকে (মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন) বলেছিলাম, তুমি তো চট্টগ্রামের লোক, রাস্তাঘাটের এ দুরবস্থা কেন, খবর নাও।সে খবর নিয়ে বলেছিল, দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। তখন ছিল ২০১৫ সাল, ২০১৭ সালে এসেও দেখি রাস্তাঘাটের অবস্থা আগের মতোই।”

বিষয়টি সম্পর্কে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে জানতেও চেয়েছেন শেখ হাসিনা।  

“মেয়রের কাছে জানতে চাইলাম, কাজগুলো শেষ করা হয়নি কেন? এগুলো তো এলজিইডি এবং সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে। এগুলোয় জাইকা সহযোগিতা করছে। জাইকা কাজ সম্পন্ন করতে দেরি করে, এরকমটা আমার জানা নেই। এটা কেন হচ্ছে সেটা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।”

চট্টগ্রামের বিমানবন্দর সড়কে ১৫ নম্বর খাল, ৭ নম্বর খাল ও ৯ নম্বর গুপ্তখালে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘সিটি গর্ভনেন্স প্রজেক্ট’ এর আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। 

২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এই তিন সেতু এলাকায় বিকল্প সেতু নির্মাণ করে যান চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজের কারণে বিমান বন্দর সড়কের গুরুত্বপূর্ণ এসব অংশে নিয়মিত যানজট লেগে থাকে।

এর আগে গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সড়কের বিমানবন্দরের প্রবেশমুখ অংশ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছিল। পরে সিটি করপোরেশন সেটি মেরামত করেছিল। তবে চলমান নানা উন্নয়ন কাজের কারণে বিমান বন্দর সড়কের বিস্তৃত অংশ জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কার গাফিলতিতে রাস্তাঘাটের এ দুরবস্থা? রাস্তা খুঁড়ে কেন ফেলে রাখা হয়েছে, সেটা আমি জানতে চাই।”

“যে কন্ট্রাকটর নিয়োগ হয়েছে, সে কাজ করেনি কেন? কাজ যদি শেষ করতে না পারে, এভাবে খুঁড়ে রেখে দেওয়া হবে কেন? আমি পরের বার আসলে যেন রাস্তার এ দুরবস্থা না দেখি।”

“সময়মতো কাজ করতে হবে। মানসম্মত কাজ করতে হবে। যেই অপকর্ম করুক, তাকে আমরা ছাড়ব না,” বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

মহিউদ্দিনের প্রশংসা

চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে তিন বারের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও মহিউদ্দিন চৌধুরী তখন নির্বাচনে জিতেছিল। চট্টগ্রামে রাস্তাঘাটসহ যত উন্নয়ন সেগুলো হয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলেই, সেটা বাস্তব কথা।”

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দীন তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন।

এর পরের  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র এখন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির; যার সঙ্গে সভাপতি মহিউদ্দিনের দ্বন্দ্ব চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচিত।

বোট ক্লাবের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তৃতার সময় উপস্থিত ছিলেন না বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন, তবে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।

হাসিনার মুখে মহিউদ্দিনের প্রশংসার সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। 

জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলামের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “কর্ণফুলী নদী রক্ষায় চট্টগ্রাম থেকে আমরা পানিসম্পদমন্ত্রী দিয়েছি। কিন্তু সেখানেও কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না।”

কর্ণফুলী নদীর যাতে ঢাকার বুড়িগঙ্গার পরিণতি না হয় তা নিশ্চিত করতে যা করণীয় সব করবেন বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে মেয়র নাছির চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীকে চট্টগ্রাম মহানগরের বর্জ্যের হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত সেন্ট্রাল স্যুয়ারেজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

“আমি চাই না কর্ণফুলী নদী বুড়িগঙ্গা নদীর মতো মৃত হয়ে যাক। নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজিং ও বে পোর্ট হচ্ছে, সাথে সাথে কর্ণফুলি নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।”

“একটি শহরের সকল বর্জ্য কর্ণফুলি নদীতে যাবে, এটা কখনও গ্রহণযোগ্য না। ওয়াসার জায়গা যেহেতু জায়গা আছে সেখানে একটা সেন্ট্রাল স্যুয়োরেজ প্ল্যান্ট করতে হবে। এটা হলে এখানকার বর্জ্য সেখানে ট্রিটম্যান্ট হয়ে তারপর নদীতে যাবে। দূষিত পানি নদীতে যাবে না।”

চট্টগ্রামের শিল্প এলাকায় অনতিবিলম্বে ট্রিটপ্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা নিতেও প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দেন।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রধানন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাংসদ মঈনুদ্দিন খান বাদল, আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভী ও দিদারুল আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম ফজলুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।