টাকা না দেওয়ায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কোচিং সেন্টার পরিচালক।
সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নগরীর জিইসির এমসিএইচ-ইউনিএইড নামে একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. রাশেদ মিয়া।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত। এর আগে তিনি চকবাজার থানার ওসি ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ বলেন, আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) অভিজ্ঞতার কারণে তার কাছ থেকে নিজের আইটি সংক্রান্ত কাজ করাতেন আজিজ। সেই সূত্রে এই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্টতা।
কোচিং সেন্টার পরিচালকের দাবি, পরিচয়ের সূত্র ধরে আজিজ তার কোচিং ব্যবসার আয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। আগেও নানা প্রয়োজনে আট লাখ টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করেননি তিনি।
“গত বছরের অগাস্টে থানায় আসামিদের সাথে বৈঠকের অপরাধে চকবাজার থানা থেকে প্রত্যাহার করে নগর বিশেষ শাখায় বদলি করা হয়। এরপর সুবিধাজনক পদায়নের জন্য আজিজ আমার কাছে ৭০ লাখ টাকা দাবি করেন।”
রাশেদ বলেন, “টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় ওসি আজিজ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া শুরু করেন।
“গত ১৬ অক্টোবর আজিজ ও আবুল মনসুর নামের এক ব্যক্তি কোচিং সেন্টারে এসে অস্ত্রের মুখে ড্রয়ারের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হিসাব নম্বরের নয়টি ও ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাব নম্বরের দুটিসহ মোট এগারটি চেকে আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর ও টাকার বিভিন্ন পরিমাণ লিখিয়ে নেয়।”
এরপর একই দিন আবুল মনসুর ৮২ লাখ টাকা পাওনার বিপরীতে কোচিং সেন্টারটি তার নামে লিখে দেওয়া হয়েছে মর্মে তিনশ টাকার একটি স্ট্যাম্পে অস্ত্রের মুখে স্বাক্ষর আদায় করে নেয় বলে জানান রাশেদ মিয়া।
রাশেদের অভিযোগ, গত ২০ অক্টোবর তার বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে তল্লাশির নামে কোচিং সেন্টারের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর থেকে তাকে নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এজন্য সিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
গত ১৬ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আজিজ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে অভিযোগ করে রাশেদ বলেন, “পাঁচলাইশ থানায় আমার নামে মামলা করতে গেলে সেখানে ‘মিথ্যা মামলাটি’ গ্রহণ করা হয়নি। এরপর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি এক মহিলাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলন থেকে পুলিশ কর্মকর্তা আজিজ আহমদের ‘ক্রমাগত হুমকি’ থেকে তাকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে আহ্বান জানান রাশেদ মিয়া।
এদিকে আজিজ আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে দাবি করেন, ব্যবসায়িক লেনদেনে আবুল মনসুর আজাদ নামের এক ব্যক্তি রাশেদের কাছে ৭০ লাখ টাকা পাবে। তাদের মধ্যেকার ঝামেলা মেটাতে আমার উপস্থিতিতে কয়েকটি বৈঠকও হয়।
“এছাড়া রাশেদ পুলিশের পোশাক পরে আমার নাম ব্যবহার করে নগরীর আগ্রাবাদ টিভিএস ব্রাঞ্চ থেকে একটি মোটর সাইকেল নিয়ে আসে। হাটহাজারী বিআরটিএ অফিস থেকে সেটা আমার নামে রেজিস্ট্রেশনও করিয়ে নেয়।”
আজিজ বলেন, আমি জানতে পেরে প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় মামলা করি, কারণ বিআরটিএর অফিস হাটহাজারী এলাকার মধ্যে পড়েছে। মূলত লেনদেনের ৭০ লাখ টাকা না দেওয়া ও মামলা করার কারণে সে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনটা করেছে।