চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও হট্টগোল

ভোট গ্রহণের দাবিতে হট্টগোলের মধ্যেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 04:35 PM
Updated : 20 Feb 2017, 04:57 PM

সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এতে চেমন আরা তৈয়রবকে সভাপতি এবং শামীমা হারুন লুবনাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও একপক্ষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে পাল্টা কমিটিও ঘোষণা করে বিরোধী পক্ষ। 

সোমবার ঘোষিত কমিটির সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী।

শামীমা হারুন লুবনা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে। তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর অনুসারী।

তবে কমিটি ঘোষণার সময় উপস্থিত নেত্রীদের একাংশ ভোটাভুটির মাধ্যমের কমিটি গঠনের দাবি জানান। এসময় অন্য অংশের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে সভাপতি পদপ্রার্থী শাহিদা আক্তার জাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সম্মেলন স্থলের বাইরে উপস্থিত থাকা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একপক্ষের ভোটাভুটির দাবি উপেক্ষা করে কমিটি ঘোষণা শুরু হলে তারা বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

“এক পর্যায়ে শাহিদা আক্তার জাহান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।”

এর আগে সোমবার দুপুরে নগরীর আনিকা কমিউনিটি সেন্টারে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। সম্মেলন উদ্বোধন করেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বেগম সাফিয়া খাতুন।

১৯৯৮ সালে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম সাফিয়া খাতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

“সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, পাঁচ জন সহ-সভাপতি, দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।”

তবে বিকালে কমিটি ঘোষণার সময় সম্মেলন স্থলে ছিলেন না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান চেমন আরা তৈয়ব।

কমিটি ঘোষণার আগে ভোট দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কমিটি ঘোষণার সময় আমি ছিলাম না। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”

সম্মেলন স্থল নির্ধারণ নিয়েও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দুইপক্ষ গত কয়েকদিন বিরোধী অবস্থান নেয়। এরপর নগরীতে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ হয়।

দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে দুটি ধারা সক্রিয় আছে। এরমধ্যে শামীমা হারুন লুবনা, ওয়াসিকা আয়শা খান, দীপিকা বড়ুয়াসহ একটি অংশ দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিনের অনুসারী।

অন্যদিকে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারীদের মধ্যে আছেন সদ্য সাবেক সভাপতি হাসিনা মান্নান, চেমন আরা তৈয়বসহ আরেকটি অংশ।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জামায়াত নেতার মেয়ে

নতুন ঘোষিত কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে শাহিদা আক্তার জাহান, ওয়াসিকা আয়শা খান, কল্পনা লালা ও ফৌজিয়া পারভিন রত্মাসহ পাঁচ জনকে। খালেদা আক্তারসহ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে।

রিজিয়া রেজা চৌধুরী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে এবং সাতকানিয়ার আওয়ামী লীগ সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর স্ত্রী।

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ নেতা বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একজন জামায়াত নেতার মেয়ে কিভাবে পদ পেলেন সেটা বুঝতে পারছি না। তিনি নিজে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানতে পেরেছি।

রিজিয়া রেজা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমপি সাহেব (নদভী) নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নারীদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি।

“আব্বা যেহেতু জামায়াত নেতা, তাই এখন আমাকে কালার করার চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে কি আমাকে পদ দিত? নিশ্চয় যাচাই বাছাই করেই কেন্দ্রীয় নেত্রীরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।”

ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিজিয়া বলেন, চট্টগ্রাম কলেজে লেখাপড়া করেছি বলে এই অভিযোগ করছে।

“নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়। এরপর রাজনীতি করার সময়-সুযোগ ছিল না। আমার ভাসুর মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী আওয়ামী লীগের সাংসদ। বাবার দিকে না গিয়ে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি।”