‘প্রিন্টিং মিসটেকে’ ‘৩০ লাখ ভাষাশহীদ’

ভাষাশহীদ দিবসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তালগোল পাকিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে সংশ্লিষ্টরা বললেন, এটা ‘প্রিন্টিং মিসটেক’।

মোস্তফা ইউসুফ, চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 04:17 PM
Updated : 20 Feb 2017, 04:53 PM

একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস উপলক্ষে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কয়েক নেতার নামে সাঁটানো পোস্টার ও ব্যানারে এরকম অসঙ্গতি চোখে পড়ে।

একুশে ফেব্রুয়ারিতে ‘৩০ লাখ শহীদের প্রতি’ শ্রদ্ধা জানিয়ে নগরীর চকবাজার এলাকার চকভিউ মার্কেট, গুলজার মার্কেট ও চট্টগ্রামে কলেজের সীমানা প্রাচীরে একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে।

১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নাহিদুল ইসলাম জাবেদের ‘সৌজন্যে’ যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর ‘পক্ষে’ ওই পোস্টারটি লাগানো হয়।

ছবিতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির আকার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নুর মোস্তফা টিনু ও নাহিদুল ইসলাম জাবেদের ছবির চেয়ে ছোটো।

পোস্টারে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ ‘নেতা’ দাবিদার নুর মোস্তফা টিনুকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভুল তথ্যের পোস্টারের বিষয়ে জানতে চাইলে নুর মোস্তফা টিনু বলেন, “প্রিন্টিং মিসটেক হয়েছে। যে পোস্টার আমরা ছাপাতে দিয়েছি সেখানে এরকম ছিল না।

“ছেলেপেলেরা খেয়াল না করে এগুলো লাগিয়েছে। এটা আসলে ‍উচিৎ হয়নি। ভাষা শহীদ দিবসে এটা আসলে মানায়নি। এগুলো সরিয়ে ফেলা হবে।”

২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ‘নেতা’ ফিরোজ পাটোয়ারির সৌজন্যে নগরীর আসকার দিঘীর দক্ষিণ পাড়ের কাঁচাবাজারের টিনের বেড়াতে একটি ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে।

২১ নং জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নাম ওই ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে লেখা হয়েছে- ‘হে অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি হাজারো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে শহীদ দিবস আমি কি তোমায় ভুলিতে পারি’।

বাক্যটি শেষ করে ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘শহীদ দিবস অমর হোক’।

ব্যানারের ডান পাশে নিচের দিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে একটি বক্তব্যও ছাপানো হয়েছে।

ওই বক্তব্যে লেখা আছে- ‘খোঁকা (খোকা) থেকে কমরেড শেখ মুজিব’। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের শব্দটি ভুল বানানো লেখা হয়েছে।

চট্টগ্রামের আসকার দিঘীর দক্ষিণ পাড়ের কাঁচাবাজারের টিনের বেড়াতে ঝুলছে এই ব্যানার

এলাকায় খোঁজ নিয়ে ফিরোজ পাটোয়ারিকে পাওয়া যায়নি।

ব্যানারে-পোস্টারে ভুল তথ্য উপস্থাপনের বিষয়ে মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যখন ছাত্ররাজনীতি শুরু করি তখন সিনিয়ররা আমাদের ক্লাস নিতেন।  

“আমরাও নেতাকর্মীদের ক্লাস করিয়েছি -রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ইতিহাসসহ নানান বিষয়ে। এখনও সে চেষ্টা আমাদের অব্যাহত আছে। তবে সবসময় আমরা সফল হতে পারিনি।”

“এখন রাজনীতিতে যে চর্চাটা হচ্ছে সেটা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সম্পর্কে জানতে তেমন সহায়ক হয় না, সেরকম প্রশিক্ষণও এখন নেই,” বলেন এই যুবলীগ নেতা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞানতা থেকে এই ধরনের ভুল।

তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ইতিহাস সম্পর্কে যে ভুল করছে তার জন্য সঠিকভাবে ইতিহাসকে না শেখানোকে দায়ী করেন এ অধ্যাপক।

“ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সহজবোধ্য করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে, তাহলে কিছুটা আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি,” বলেন এই অধ‌্যাপক।