তিনি বলেন, “রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ভালো করে একটা পরীক্ষা নিতে পারি না, এরচেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে।”
শুক্রবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘শব্দকল্পদ্রুম পিপীলিকা বাংলা উৎসবে’ এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না, তাহলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। তার মানে ওই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয় নাই।
“আপনারা জানেন যে প্রশ্নপত্রের ভিন্ন ভিন্ন সেট থাকে। যেমন ‘এ’ সেট, ‘বি’ সেট, ‘সি’ সেট ইত্যাদি। সবগুলো সেটই আউট হয়ে যাচ্ছে।”
চলমান এসএসসি পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগের মধ্যে পরীক্ষার্থী সেজে যোগাযোগ করে ঢাকা বোর্ডের গণিতের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের রাতেই পেয়েছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদক। ১১ ফেব্রুয়ারি ওই পরীক্ষার পর মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তা হুবহু মিলে যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পরদিন আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পেছনে নীতিনির্ধারকদের ‘শিথিল মনোভাব ও জড়িতদের শাস্তি না হওয়াকে’ দায়ী করে সরকারের পরিকল্পনায় সমস্যা থাকার কথা বলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
“প্রশ্নপত্র ছাপানো ও বিতরণ যার দায়িত্ব, আমি তো দেখলাম না তার কোনো শাস্তি হতে; … এত বড় একটা অন্যায় হচ্ছে, উনার গাফিলতির কারণে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। আমি যদি দেখতাম যে জড়িতদের জেল দেওয়া হচ্ছে, তাহলে ধরে নিতাম যে এটা রোধ করার জন্য তারা আন্তরিক।
“কিন্তু কারো কোনো দায়দায়িত্ব নাই। উনারা ধরে নিয়েছেন যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে এবং এভাবেই চলবে। এভাবে চলতে পারে না আসলে।”
তিনি বলেন, “যে শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁস দেখে নাই, নিজের মত করে পরীক্ষা দিয়েছে, সে যখন দেখে একজন ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে তার চেয়ে ভালো কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, তখন তার যে মনোবেদনা, তাকে কীভাবে কী বলে সান্ত্বনা দেব, সেটা ভেবে আমি কূল পাই না।”
‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব’ মন্তব্য করে নিজের এমন দৃঢ় বিশ্বাসের পক্ষে মেডিকেল কলেজগুলোর সর্বশেষ ভর্তি পরীক্ষার উদাহরণ টানেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
“মেডিকেলের সর্বশেষ ভর্তি পরীক্ষায় তারা আমাকে ডেকেছিল। পরীক্ষা প্রক্রিয়া দেখার জন্য তারা একটি কমিটি গঠন করেছিল। পুরো ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। উনারা এতো সুন্দর করে প্রশ্ন করেছেন, প্রশ্নপত্র বিতরণ করেছেন এবং যে পরীক্ষা নিয়েছেন সেটা একদম ক্রুটিমুক্ত।
“কাজেই আমি এখন জানি, প্রশ্ন ফাঁস না করে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। প্রশ্ন যদি ফাঁস হয়, তাহলে তাহলে বুঝে নিতে হবে, ফাঁস ঠেকানোর দায়িত্ব নিতে তারা রাজি নয়।”
দিনব্যাপী পিপীলিকা বাংলা উৎসবে নগরীর ১৭টি স্কুলের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
আয়োজকরা জানান, দেশের আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে এ উৎসব হবে। ভাষার প্রতি শিক্ষার্থীদের মমত্ববোধ বাড়ানো ও ভাষাজ্ঞান রপ্ত করতেই এ উৎসবের আয়োজন।