চট্টগ্রামে মহিউদ্দীনের স্ত্রীর বিরোধীদের পাল্টা কমিটি গঠন

চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এক পক্ষের বিক্ষোভের মধ্যে কমিটি গঠনের পরদিনই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে বিক্ষুব্ধ অংশটি।

চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2017, 11:18 AM
Updated : 15 Feb 2017, 11:56 AM

১৮ বছর পর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন সভাপতি ঘোষণা দেওয়া হয়।

আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপতী সেনগুপ্তার সমর্থকরা সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই হাসিনা মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী আচরণের’ অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করে।

এরপর কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রায় দুই দশক একই দায়িত্বে থাকা হাসিনাকেই পুনর্নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। নতুন সাধারণ সম্পাদক করা হয় আঞ্জুমান আরা চৌধুরীকে।

কাউন্সিলে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা কমিটির ঘোষণা দেন হাসিনাবিরোধীরা।

পাল্টা কমিটিতে নমিতা আইচকে সভাপতি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদিকা করা হয়েছে রেখা আলম চৌধুরীকে। সহ-সভানেত্রী করা হয়েছে যথাক্রমে তপতী সেনগুপ্তা, ফেরদৌসী নাজিম ও হাছিনা জাফরকে। সহ-সাধারণ সম্পাদেকর পদ দেওয়া হয়েছে রেহানা বেগম রানু ও আঞ্জুমান আরা বেগম।

সাংগঠনিক সম্পাদক মর্জিনা আক্তার লুচি। সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নবুয়াত আরা সিদ্দিকী ও মিলি চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক নাছরিন আক্তার নাহিদা এবং প্রচার সম্পাদক রুমা দাশ।

কাউন্সিলে ঘোষিত কমিটিতে সহ-সভানেত্রী পদে রাখা হয়েছিল তপতীকে। ওই কমিটিতে রেখা আলম চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

বিক্ষুব্ধ অংশটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সংবাদ সম্মেলনে তপতী সেনগুপ্তা বলেন, “আমাদের এত বছরের রাজনীতির জীবনের চরম অপমান, লাঞ্ছনা ও দুঃখের কথা জানাতে এসেছি। গতকালের তথাকথিত সম্মেলনে প্রবীণ, ত্যাগী ও দক্ষ নেত্রীদের বাদ দিয়ে কাগুজে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শুনেছি।”

কান্না জড়ানো কণ্ঠে তপতী বলেন, “যে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বলা হয় টাইগার অব চিটাগাং, সেই ফ্যামিলির জন্য আজ এ অবস্থা। বউকে সভানেত্রী করতে তিনি উঠে-পড়ে লেগেছেন। পুলিশ মহিলাদের উপর হাত তুলেছে।”

কাউন্সিলে ঘোষিত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক তপতী বলেন, “হঠাৎ করেই সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে আমরা হতভম্ব। সেখানে সাধারণ সম্পাদক হয়েও আমি পর্যন্ত ছিলাম না। এভাবে মিটিং হয়? তারা করে ফেলেছে। কমিটি মানি না।

“তারা আমাকে সভানেত্রী করলেও থাকব না। পদ নয়, ন্যায় লাগবে। উনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) কে? মহিউদ্দিন ভাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন তাই একজনকে রেখে যাচ্ছেন?”

পদ পাওয়ার পরও পাল্টা কমিটি ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে রেখা আলম চৌধুরী বলেন, “১৮ বছর পর সম্মেলন। সম্মেলন বানচাল নয়, সার্থক করতে চেয়েছি। কিন্তু ৫০০ ডেলিগেট নিয়ে গিয়েও আমরা পুলিশের বাধায় সম্মেলনে ঢুকতে পারিনি।

“তারপর ঘরে চলে আসি। কী কমিটি হয়েছে জানি না। আমাকে অবহিত করা হয়নি। শুনেছি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়। তখন সেখানে হট্টগোল হয়। তারপর আমার নাম বাদ দেওয়া হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে তপতী সেনগুপ্তা লিখিত বক্তব্য পাঠের মাঝামাঝিতে বিরতি দেন। তিনি অসুস্থ বলে জানানো হয়। এরপর এক নেত্রী সেটি আবার পড়া শুরু করলে সংবাদকর্মীরা তা না পড়তে অনুরোধ করেন।

পাল্টা কমিটি ঘোষণার সময় নমিতা আইচ একবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তপতী সেনগুপ্তার নাম ঘোষণা করেন। এসময় রেখা আলম চৌধুরী বাধা দেন।

পরে নমিতা আইচ বলেন, “আসলে নেত্রীদের বয়স হয়েছে। অনেকে অসুস্থ। একেক জন একেক জায়গায় থাকি। তাই একটু সময় লাগছে।”

এরপর তিনি সাধারণ সম্পাদিকা হিসেবে রেখা আলম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন।

কাউন্সিলে ঘোষিত কমিটিতে তপতীর সঙ্গে সহ-সভানেত্রী পদ দেওয়া হয় মমতাজ খান, রওশন আরা ইউসুফ, নূর নাহার মোতালেব, রওশন আরা আমিন, হামিদা রশিদকে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় নীলু নাগ, রেখা আলম চৌধুরী ও মালেকা বেগমকে। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান হোসনে আরা বেগম।

কাউন্সিল শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামের তালিকা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সম্মেলনের প্রধান অতিথি ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন হাসিনা মহিউদ্দিন।

১৯৮৪ সালে প্রয়াত নীলুফার কায়সারকে সভানেত্রী করে নগর মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ১৯৯৮ সালে সম্মেলনে হাসিনা মহিউদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী করা হয়।