রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে মালয়েশিয়া

রোহিঙ্গা সমস্যার ‘স্থায়ী সমাধানে’ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূত নূর আশিকিন বিনতে মোহাম্মদ তায়ইব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2017, 02:45 PM
Updated : 14 Feb 2017, 02:45 PM

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) জেটিতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য ত্রাণ নিয়ে আসে ‘নটিক্যাল আলিয়া’ নামের জাহাজ থেকে ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দুই দেশের মধ্যে অনেক কমন ইস্যু আছে। আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে কাজ করছি।

“মানবিক কারণে পুতেরা ওয়ান মালয়েশিয়া ক্লাব এবং এমপিআইএম এসব ত্রাণ নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ১৯৯১ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে তা বিশ্ব স্মরণ রাখবে।”

রাষ্ট্রদূত তায়ইব বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মালয়েশিয়ার সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (মেরিটাইম ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশের পর নৌবাহিনী তিন দিন দুই রাত জাহাজটিকে জলসীমায় নিরাপত্তা দিয়েছে।

“আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন) এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে এসব পণ্য বিতরণ করা হবে। এক হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন পণ্য তারা নিয়ে এসেছে।”

জাহাজে আসা দলের মধ্যে থেকে ২৫ জনকে বাংলাদেশের ভিসা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

‘আশাকরি বিশ্বের চোখ খুলবে’

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সরবরাহের কাজটি করছে তুরস্কভিত্তিক তার্কি দিয়ানেত ভাকফি (টিডিভি) ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পুতেরা ওয়ান মালয়েশিয়া ক্লাব এবং মালয়েশিয়ান কনসালটেটিভ কাউন্সিল অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন (এমপিআইএম)।

ত্রাণবাহী জাহাজটির সঙ্গে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে আছেন ‘ফুড ফ্লোটিলা’ নামের বহরের দল প্রধান মালয়েশিয়ার সাংসদ দাতুক শ্রী পাংলিমা আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহিম।

তিনি পুতেরা ওয়ান মালয়েশিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান। এছাড়াও আছেন আরেক সাংসদ এমপিআইএমর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আজমি বিন আবদুল হামিদ।

অনুষ্ঠানে দাতুক শ্রী পাংলিমা আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহিম জনান, মালয়েশিয়ার সংসদে সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“মালয়েশিয়ার ৩০ মিলিয়ন মানুষের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আমরা এসেছি।

“আগামীকাল আমরা কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাব। এই জাহাজে ১৯টি দেশের ১৮৩ জন স্বেচ্ছাসেবক আছে। তারা সবাই বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে এসেছে। আশাকরি এ বিষয়ে বিশ্বের চোখ খুলবে।”

দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল আজিজ বলেন, “আপনারা একা লড়াই করছেন। আমরা আপনাদের সাথে আছি। এখন আর আপনারা একা নন।

“ঠেঙ্গারচরে তাদের সেবা ও কল্যাণের জন্য আমরা একসঙ্গে ভবন নির্মাণ করতে চাই নিকট ভবিষ্যতে।”

এমপিআইএমর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আজমি বিন আবদুল হামিদ বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় সেলক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করতে চাই।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দা সারোয়ার জাহান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, কাস্টমস কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান, চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, নৌবাহিনীর বেইজ কমান্ডার কমডোর এম মুসা, আইওএম এর হেড অব রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট রাইদ রামাহি এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল বিএমএম মাহরারুল হক। 

জাহাজটিতে কন্টেইনার ও বাল্ক কার্গোতে থাকা চাল, চিনি, চা পাতাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী বন্দরের কার্যক্রম শেষে চট্টগ্রাম থেকে দেড়শ ট্রাকে করে কক্সবাজারের নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।