নৌমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও প্রত্যাহার হয়নি জাহাজ শ্রমিকদের কর্মবিরতি

বর্ধিত বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের একাংশের ডাকা কর্মবিরতি নৌমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরও প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2017, 02:31 PM
Updated : 13 Feb 2017, 02:31 PM

সোমবার রাজধানীতে নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে সভায় লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা সময় চাওয়ায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি বলে দাবি করছেন ধর্মঘট আহ্বানকারী শ্রমিক নেতারা।

লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকালে মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সাথে সভা হয়েছে।

“সভায় লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা সময় চেয়েছেন। শ্রমিকদের দেওয়া কাগজপত্র মন্ত্রী পরীক্ষা করে দেখেছেন। এরপর সভা থেকেই তিনি জ্বালানি ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন।”

এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শ্রম পরিচালকের সঙ্গে আরেকটি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

মালিক সমিতির প্রনিধিরা সময় চাওয়ায় শ্রম পরিচালকের দপ্তরে এই সভার বিষয়টি মন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন বলে জানান শ্রমিক নেতা সাহাদাত হোসেন।

লাইটার জাহাজ মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ওই সভা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা আন্দোলনকারী শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতাদের।

বর্ধিত হারে বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের একাংশ শনিবার সকাল থেকে শুরু করে এই ধর্মঘট ও কর্মবিরতি। তিন দিনের এই ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পণ্য খালাস ব্যবস্থা।

সরকারের নতুন গেজেট অনুসারে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বর্ধিত বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও সব জাহাজ মালিক তা না দেওয়ায় কর্মবিরতিতে যায় শ্রমিকরা।

শ্রমিক নেতা সাহাদাত হোসেন বলেন, “বর্ধিত বেতন-ভাতার কথা বলে মালিকরা ১ জানুয়ারি থেকে লাইটারের ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে। এজন্য আমরা গত মাসেই লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম।

“১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্ধিত বেতন-ভাতা পরিশোধের কথা থাকলেও অনেক মালিক তা করেননি। আশা করি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ হবে।”

চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে চলাচলকারী প্রায় দেড় হাজার লাইটার জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের মালিক প্রায় ৮০০ জন। এগুলোসহ সারাদেশের সব নৌরুট মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার লাইটার জাহাজ চলাচল করে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা মাদার ভেসেল (বড় আকারের জাহাজ), কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট এবং বিভিন্ন জেটি থেকে লাইটার জাহাজে করে পণ্য পরিবহন করা হয়।

লাইটার জাহাজ মালিকদের পাঁচটি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ট্যাংকার, একটি কোস্টার, একটি কার্গো এবং একটি খুলনা এলাকার লাইটার মালিকদের সংগঠন।

লাইটার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে।

“খুলনার মালিক সমিতি ছাড়া অন্য চার সংগঠনের প্রতিনিধিরা আগামীকালের সভায় আসবেন। আশা করি একটি সন্তোষজনক সমাধান হবে।”

আকস্মিকভাবে কর্মবিরতি শুরুর সমালোচনা করে খুরশীদ আলম বলেন, “সমিতির নির্বাচন ১৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগে আগে নেতৃত্ব দেখানোর জন্য কেউ কেউ এই আন্দোলন শুরু করেছে। কারণ জানে আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকব।”

এদিকে লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের একটি অংশ কর্মবিরতির ডাক দিলেও অন্য একটি অংশ ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে।

যে অংশটি কর্মবিরতি পালন করছে তারাও ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্ম বিরতি পালনের কথা গত ৬ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিল। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে হঠাৎ করেই তারা কর্ম বিরতি শুরু করে।

হঠাৎ শুরু কর্ম বিরতির কারণে অচল হয়ে পড়েছে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট। এসব ঘাটে ৬০টি লাইটার জাহাজ পণ্য নিয়ে অপেক্ষায় আছে।

পাশাপাশি শনিবার রাত থেকে বন্দরের বর্হিনোঙরে থাকা মাদার ভেসেলের পণ্য খালাসও কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে থাকা অন্তত ২৪টি মাদার ভেসেল (বড় আকারের জাহাজ) থেকে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে কর্মবিরতির কারণে লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) রোববারের বার্থিং মিটিং (লাইটার বরাদ্দের সভা) বাতিল করা হয়েছে। ফলে পণ্য খালাসের জন্য নতুন করে আর কোনো লাইটার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।