ভোটের আগের দিন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ‘লাঞ্ছিত’

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনে চেম্বার ও পার্কিং বরাদ্দ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহেদ বীরুকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2017, 03:15 PM
Updated : 11 Feb 2017, 03:15 PM

রোববার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের আগের দিন শনিবার দুপুরে সমিতির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান জাহেদ বীরু।

এ ঘটনার জন্য সমিতির সাবেক সভাপতি মুজিবুল হককে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনজীবী সমিতি।

জাহেদ বীরু মুক্তিযুদ্ধ ও আইনজীবীদের স্বার্থে দুর্নীতিমুক্ত ঐক্য প্রত্যয়ী ‘সমমনা আইনজীবী সংসদ’র পক্ষ থেকে গতবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসী আইনজীবী ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’র প্রার্থী ছিলেন।

জাহেদ বীরু যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন সেই মুজিবুল হক আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’ থেকে সভাপতি হয়েছিলেন তাদের আগের কমিটিতে।

ঘটনার বিষয়ে জাহেদ বীরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুরে নামাজের পরপর সমিতির কার্যালয়ে অর্থ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মানিক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

“এ সময় সাবেক সভাপতি মুজিবুল হকসহ কয়েকজন আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে হৈ চৈ করেন। তারা দরজায় লাথি দেন বলেও শুনেছি। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমি উপস্থিত হই। তারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।”

নতুন ভবনের পার্কিং বরাদ্দ নিয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়ে জাহেদ বীরু বলেন, “কিন্তু সেগুলো আমরা বরাদ্দ দিচ্ছি না। নির্বাচনের পর এ বরাদ্দ নতুন কমিটি দেবে।”

আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুজিবুল হকের নেতৃত্বে তারা এসে আমার সাধারণ সম্পাদকের দিকে তেড়ে যায় এবং তাকে ঘুষি মারতে উদ্যত হয়।

“চেম্বার বরাদ্দে কোনো অনিয়ম হয়নি। পার্কিং বরাদ্দ করবে পরবর্তী নির্বাচিত কমিটি। এটা গণতান্ত্রিক সংগঠন। কোনো অনিয়ম যদি হয়ও তা উদ্ধারের দায়িত্ব মুজিবুল হককে কে দিয়েছে?”

নতুন ভবনে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে তিনি বলেন, ৬৬০টি কক্ষ আগেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পার্কিং স্পট বরাদ্দ পেতে ২৬ জন আবেদন করেছেন। তারা একমত হতে না পারায় বিষয়টি পরবর্তী কমিটির জন্য রাখা হয়েছে।

“পার্কিং স্পটের আবেদনকারীদের মধ্যে আমি বা মুজিবুল হক কারো নামই নেই। তারা আজকের ঘটনার মধ্য দিয়ে সংগঠনের ইমেজে আঘাত করেছেন।”

ঘটনার বিষয়ে মুজিবুল হক বলেন, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির ১২৫ বছরের রীতি অনুসারে ডিসেম্বরের পর কমিটি রুটিন কাজের বাইরে অন্য কাজ করে না। রীতি ভঙ্গ করে তারা চেম্বার ও পার্কিং স্পেস বরাদ্দ দিয়েছে।

“সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এ কাজ করেছেন। তারা আজকেও পার্কিং বরাদ্দ করেছে। সাধারণ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে সমিতির কার্যালয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমিও ছিলাম। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিরত থাকতে বলেছি।”

এ ঘটনার জের ধরে বিকালে আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়।

সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “অসদাচরণের কারণে কেন মুজিবুল হকের সমিতির সদস্যপদ স্থগিত করা হবে না তা জানতে চেয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

রোববারের সমিতির নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ, সমমনা আইনজীবী সংসদ ও আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি মানবপাচার মামলার আসামি এক আইনজীবী জামিন না পাওয়ায় চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এজলাস ভাংচুরে অংশ নেন একদল আইনজীবী।