লালদীঘির ২৪ হত্যা: নিহত দুজনের স্বজনদের সাক্ষ্যগ্রহণ

২৯ বছর আগে চট্টগ্রামের লালদীঘিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে এসে ‘পুলিশের গুলিতে’ হাসান মুরাদ ও স্বপন কুমার বিশ্বাস মারা গিয়েছিলেন বলে আদালতে সাক্ষ্যে বলেছেন তাদের স্বজনরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2017, 08:40 AM
Updated : 31 Jan 2017, 11:32 AM

চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন নিহত হাসান মুরাদের মা হাসনা বানু এবং নিহত স্বপন কুমার বিশ্বাসের ভাই অশোক কুমার বিশ্বাস।

ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালতে হাসান মুরাদের মা হাসনা বানু সাক্ষ্য দেওয়ার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

“কান্না করতে করতে তিনি সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন।”

আদালতে হাসনা বানু বলেন, ঘটনার দিন তিনি পাথরঘাটার নজু মিয়া রোডের বাসায় ছিলাম। বেলা আড়াইটার দিকে মুরাদের এক বন্ধু বাসায় এসে খব দেয়- পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন এলাকায় পুলিশের গুলিতে মুরাদ মারা গেছে।

তিনি বলেন, “এ খবর পেয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরিবারের লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মুরাদের লাশ দেখতে পায়। পরদিন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পোস্ট মর্টেম করে আমাদেরকে লাশ দেয়।”

ঘটনার সময় নিহত হাসান মুরাদ ছিলেন নগরীর লামার বাজার এ এস পৌর কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

ওইদিনের ঘটনায় নিহত স্বপন কুমার বিশ্বাসের বড় ভাই অশোক কুমার বিশ্বাসও মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দেন।

আদালতে স্বপন বলেন, “আমার ভাই শেখ হাসিনার জনসভায় গিয়েছিল। পুলিশ গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করে।

“খোঁজ নিয়ে আমরা হাসপাতালে যাই। জেনারেল হাসপাতালে পোস্ট মর্টেম করে পরদিন বিকালে আমাদের কাছে লাশ দেয়। সেদিন সন্ধ্যায় শ্মশানে নিয়ে তাকে দাহ করি। তখন ভাইয়ের মাথায় গুলির চিহ্ন দেখতে পাই।”

এদিন দুই সাক্ষী জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদেরকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।

আদালত আগামী ১৫ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের শেষ দিকে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নগরীর লালদীঘি ময়দানে এক জনসভায় যাওয়ার পথে তার গাড়িবহরে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ।

এতে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়।

নিহতরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।

এরশাদের সামরিক শাসনের অবসানের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় গত ২০ বছরে মোট ৪৩ জন সাক্ষ্য দিলেন। এর মধ্যে গত বছরের ২০ জানুয়ারি মামলাটি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত আটজন সাক্ষ্য দিলেন।

সাজেদা আমু তোফায়েলকে সাক্ষ‌্য দিতে সমন

আলোচিত এই হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের তিন প্রবীণ নেতা সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ‌্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে সাক্ষ্য দিতে হাজির করতে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে জজ মীর রুহুল আমিন এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু, নিহতদের তিন স্বজন এবং চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ‌্য নিতে সমন জারির আবেদন করা হয়েছিল।

“আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে ১০ জনকেই সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন।”

এ মামলায় ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস‌্য ড. অনুপম সেন এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।